চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা

আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করার জন্য চাকরি কখনও যথেষ্ট নয় ৷ তাই আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার আশায়  বেশিরভাগ চাকরিজীবী চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য আইডিয়ার খোজ করে থাকেন।

একজন চাকরিজীবী চাইলেই সব ধরণের ব্যবসা করতে পারবেন না। কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে সময় দিতে না পারলে অনেক ব্যবসাই করা সম্ভব না। আবার কোন একটা ব্যবসা শুরু করে অন্য কারো মাধ্যমে সেটি পরিচালনা করা গেলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মালিকপক্ষ সামনে উপস্থিত না থাকলে কর্মচারিরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না।

তাই চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইলে এমন ব্যবসা করতে হবে যা আপনি সহজেই মেনেজ করতে পারবেন। তাই চাকরির পাশাপাশি করা যায় এমন কিছু ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে আজকের এই আর্টিকেল।

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসার আইডিয়া

(১) রিসেলার ব্যবসা

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে রিসেলার ব্যবসা শুরু করা যায় ৷ বাড়িতে পড়ে থাকা পুরাতন জিনিসপত্র অনলাইন বা অফলাইনে সেল করে বেশ ভালো পরিমাণে প্রফিট করা সম্ভব ৷

নিজের জিনিসের পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যম যেমন পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এদের থেকে পুনরায় ব্যবহার করা যাবে এধরনের পুরাতন বা ব্যবহার করা জিনিসপত্র স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে অনলাইনে বিক্রি করা যায় ৷ ছোটখাট কোন প্রতিষ্ঠান খুলে সেই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারেও আপনি বিক্রি করতে পারেন ৷

রিসেলার ব্যবসার প্রচুর লাভ করা সম্ভব ৷ কেননা এখানে কোন কিছুর দাম নির্দিষ্ট না ৷ বাজারে চাহিদা রয়েছে কিন্তু পাওয়া যায়না এরকম হলে তার দামও হবে আকাশচুম্বী ৷ রিসেলার ব্যবসা তাই চাকরির পাশাপাশি ভালো আয় করার একটি সুবর্ন সুযোগ ৷

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ১০ টি নতুন ব্যবসার আইডিয়া

(২) কুকিং বা বেকিং বিজনেস 

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করতে চাইলে অবসর সময়ে মজাদার খাবার, কেক, চকলেট ইত্যাদি সুস্বাদু খাবার রান্না করে তা বিক্রি করার মাধ্যমেও বেশ ভালো পরিমাণে টাকা উপার্জন করা যাবে ৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে কুকিং বিজনেস বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ৷

ভোজনরসিক বাঙালি জনগোষ্ঠীর দিকে তাকালেই বোঝা যায়, মজাদার খাবারের জন্য তারা প্রচুর খরচ করতে পিছপা হয় না ৷ তাই আমাদের দেশে এই ব্যবসার বিসাল ক্ষেত্র রয়েছে।

নিজে রান্না করতে না পারলেও বাড়ির অন্য কারো সাহায্য নিয়ে অনায়াসে চালিয়ে যাওয়া যাবে এই ব্যবসা ৷ অনলাইন হতে পারে আপনার খাবারের প্রচারের অন্যতম মাধ্যম।  তাই চাকরির পাশাপাশি কুকিং বা বেকিং বিজনেস হতে পারে আয়ের অন্যতম একটি বড় মাধ্যম ৷

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ১০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

(৩) ফটোগ্রাফার 

বর্তমান সময়ে সুন্দর ছবি তুলতে পারা ব্যক্তির চাহিদা হুহু করে বেড়ে চলেছে ৷ বিশেষত স্যোসাল মিডিয়া, যেমন : ফেসবুক,টুইটার,ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদির বদৌলতে ফটোগ্রাফি করে টুকটাক আয়ও করা যাচ্ছে ৷ সুন্দর সুন্দর ছবি তুলে পোষ্ট করার এক নীরব প্রতিযোগীতার মধ্যে দিয়ে আমরা যাচ্ছি ৷ সবাই সুন্দর করে ছবি তুলতে না পারলেও নিজেকে এ প্রতিযোগীতায় পিছনে ফেলতে আগ্রহী নয় ৷

দিনকে দিন ফটোগ্রাফি হাউজের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে ৷ এর বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখেই মূল আয়ের উৎস হিসেবে ফটোগ্রাফিকে বেছে নিচ্ছে অনেকেই ৷ তাই আপনি যদি ভালো ছবি তুলতে পারেন তবে চাকরির পাশাপাশি পার্টটাইম ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করে আয় করতে পারবেন ৷  আবার অনেক সাইট আছে যেগুলোতে আপনি ছবি আপলোড করে আয় করতে পারেন। যেমনঃ এডোবি স্টক, সাটার স্টক, এলামি, ইটসি, ৫০০ পিএক্স ইতাদি।

(৪) অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং 

বর্তমানে অবসর সময়কে কাজে লাগিয়ে আয়ের জন্য বড় একটি মাধ্যম হতে পারে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা ৷ বড় বড় কোম্পানির প্রোডাক্ট থেকে শুরু করে ছোট ছোট কোম্পানির প্রোডাক্ট ও এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের কল্যাণে বর্তমানে বেশ ভালো বিক্রি হচ্ছে ৷

আর এর ফলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ে পার্টটাইম ক্যারিয়ার গড়াও অনেক সহজ হয়ে পড়েছে ৷ জনপ্রিয় পণ্যের এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে ভালো সাড়া পাওয়া সম্ভব ৷ বাংলাদেশেও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার সুযোগ করে দিয়েছে ৷ চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে তাই আমাজন, দারাজ ইত্যাদি কোম্পানির এ্যাফিলিয়েট মার্কেটার হয়ে ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন ৷

অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করার জন্য আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকলে খুব ভাল। আপনার ওয়েবসাইটের কন্টেন্টের মাধ্যমে আপনি সহজেই অ্যাফিলিয়েট পণ্য প্রমোট করতে পারবেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করেও আপনি অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন। চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করার জন্য অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং হতে পারে আপনার অন্যতম চয়েজ।

(৫) কন্টেন্ট/আর্টিকেল রাইটিং 

কন্টেন্ট বা আর্টিকেল রাইটিং চাকরির পাশাপাশি আয় করার জন্য বেশ ভালো একটি মাধ্যম হতে পারে ৷ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সংবাদপত্র,ওয়েবসাইট ইত্যাদি মাধ্যমে লেখালেখি করে চাকরির পাশাপাশি অবসর সময়ে আয় করা যাবে ৷

ভালো মানের কন্টেন্ট বা আর্টিকেল লিখতে পারলে তার চাহিদা অবশ্যই থাকবে ৷ আর্টিকেল লেখার জন্য একটি মোবাইল বা কম্পিউটারই যথেষ্ট হওয়ায় আলাদা করে কোনরূপ ইনভেস্ট করার প্রয়োজন পড়বে না ৷ অবসর সময়ে নিজের রাইটিং স্কিল কাজে লাগিয়ে তাই কন্টেন্ট বা আর্টিকেল রাইটার হিসেব অর্থ উপার্জন করা যাবে ৷

(৬) কোচিং সেন্টার

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে আপনি একটি কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন ৷ তবে কোচিং সেন্টার তারাই দিতে পারবে যাদের আগে কোচিং বা টিউশনি করার অভিজ্ঞতা আছে। কারণ কোচিং বা টিউশনির অভিজ্ঞতা না থাকলে আপনি চাইলেই একটি কোচিং সেন্টার দিতে পারবেন না। কোচিং এ ক্লাস নেওয়ার জন্য অভিজ্ঞতা একটি বড় ফ্যাক্টর।

(৭) পার্টটাইম ডেটা এন্ট্রি 

ডেটা এন্ট্রি

পুরো বিশ্ব এখন ছোট একটি গ্রামের মত হয়ে গিয়েছে ৷ খুব সহজেই একজনের প্রয়োজন আরেকজন জেনে যাচ্ছে ৷ সমাধানও হয়ে গিয়েছে তুলনামূলক সহজতর ৷ ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজের জন্য এখন ডাটা এন্ট্রি করতে হয় ৷ তেমনি বড় বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছোট ছোট দোকানেও আজকাল ডাটা এন্ট্রি করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় ৷

আর এজন্যই ডেটা এন্ট্রি কাজের জন্য সবসময়ই জনবলের প্রয়োজন হয় ৷ আর এই কাজটি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান ফ্রিলেন্সারদের মাধ্যমে করিয়ে থাকে ৷ আপনি চাইলে চাকরির পাশাপাশি ডেটা এন্ট্রির কাজ করতে  পারবেন  ৷বিভিন্ন ফ্রিলেন্স মার্কেটপ্লেস থেকে আপনি খুব ডেটা এন্ট্রির কাজ পেতে পারেন ৷ এসব কাজ করে আপনি ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন।

(৮) অনলাইন অ্যাসিস্ট্যান্ট 

অনলাইন এসিস্ট্যান্ট নামটা শুনতে একটু অন্যরকম মনে আপনাকে জানিয়ে রাখি অনলাইন অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে চাকরির পাশাপাশি আপনি ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন ! এটা আপনার জন্য একটি চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হতে পারে।

অনলাইন অ্যাসিস্ট্যান্ট বা ভারচুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টদের কাজ হচ্ছে দূর থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজে সাহায্য করা। যেমন ইমেল রিসিভ এবং পাঠানো, গ্রাহকদের ফোন করা এবং তাদের ফোন রিসিভ করা, মিটিং এর আয়োজন, বিভিন্ন ফাইল চেক করা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনা করা ইত্যাদি। আপনি যদি এসব কাজে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করতে পারেন। যদি দেখেন আপনি প্রচুর ক্লায়েন্ট পাচ্ছেন তাহলে কিছু দক্ষ কর্মী নিয়ে একটি এজেন্সি দিতে পারেন।

(৯) পিডিএফ বিক্রি 

চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে আপনি পিডিএফ বিক্রির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এটা খুব কঠিন কোন কাজ নয়। আপনি যদি একজন ভাল লেখক হয়ে থাকেন তাহলেই এই ধরনের ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

আর যদি আপনি ভাল লেখক না হয়ে থাকেন তাহলে অন্য কাউকে দিয়ে লেখিয়ে নিতে পারেন।

পিডিএফ বিক্রি করার জন্য আপনার একটি ওয়েবসাইটের প্রয়োজন। সেখানে আপনার বিভিন্ন কন্টেন্টের মধ্যে আপনি আপনার বইয়ের বিজ্ঞাপন দিবেন। কিছু চুম্বক অংশ তুলে ধরবেন। এছাড়া আপনি ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। খুব অল্প খরচেই আপনি অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছে যেতে পারবেন।

(১০) ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যবসা

বর্তমানে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা হিসেবে ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যবসা জনপ্রিয় হচ্ছে। যে কেউ ইচ্ছে করলে ডোমেইন এবং হোস্টিং ব্যবসা শুরু করতে পারে। তবে আপনি সরাসরি কম্পিউটার সেট করে সকল যন্ত্রপাতি এবং সফটওয়ার ইন্সটল করে এই ধরণের ব্যবসা করতে পারবেন না কারণ এভাবে ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে অনেক সময় দিতে হবে।

আপনি যদি ডোমেইনের ব্যবসা করতে চান তাহলে আপনাকে ডোমেইন কিনে রেখে ধরে রাখতে হবে। তারপর আপনি বিভিন্ন সাইটে সেই ডোমেইন বিক্রি করার অফার দিবেন।  অনেক সময় দেখা যায় ১০০০ টাকা দিয়ে কেনা ডোমেইন ২০-৩০ হাজার বা তার চেয়ে বেশি দিয়েও বিক্রি করা যায়।

হোস্টিং এর ক্ষেত্রে আপনি একভাবে ব্যবসা করতে পারেন সেটা হচ্ছে আপনার হোস্টিং স্পেস ভাড়া দেওয়া। ধরেন আপনি একটি কোম্পানি থেকে হোস্টিং প্যাকেজ কিনলেন সেখানে আনলিমিটেড সাইট যোগ করা যায়। তখন আপনি চাইলে অন্যদের সাইট আপনার হোস্টিং এ যুক্ত করে তাদের কাছ থেকে প্রতি বছরে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ চার্জ হিসেবে নিতে পারেন।

পরিশেষে

আসলে চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করা বেশ কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং একটা ব্যাপার। তবে আপনার যদি আগ্রহ, ধৈর্য এবং পরিশ্রম করার মানসিকতা থাকে তাহলে আপনার দ্বারা চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করা সম্ভব। সবসময় লেগে থাকতে হবে। হাল ছাড়া যাবে না। প্রথমদিকে হয়তো আপনি যথেষ্ট মুনাফা করতে পারবেন না। কিন্তু ব্যবসা যখন পুরোদমে চালু হয়ে যাবে তখন আপনি ভাল পরিমাণে মুনাফা করতে পারবেন।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

1 COMMENT

  1. আমার কোন ওয়েব সাইট নাই কি করে স্বল্প/নাম মাত্র বা বিনা মূল্যে ওয়েব সাইট খোলা যায়। অনুগ্রহ পূর্বক জানালে কৃতার্থ হবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here