ভারত-থেকে-পণ্য-আমদানি

চীনের পরই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে যে দেশটি থেকে সেটি হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ ভারত থেকে ৫৭৯ কোটি ৩৬ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন কি বিশাল পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশে ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি বেশি হওয়ার একটা বড় কারণ হচ্ছে ভারত আমাদের নিকট প্রতিবেশী এবং ভারতে সস্তায় ভাল মানের পণ্য পাওয়া যায়। এছাড়া দুই দেশের মধ্যে সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভারত থেকে পণ্য আমদানি বৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা পালন করছে। যে কেউ এখন চাইলেই ভারতে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের পণ্য কিনে আসতে পারে।

ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার তালিকা

ভারত থেকে বিভিন্ন ধরণের পণ্য আমদানি করা হয়। এসব পণ্যের মধ্যে কিছু কমন পণ্য আছে যেগুলো বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয়। নিচে ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার একটি তালিকা দেওয়া হলো –

# কসমেটিক্স

# শাড়ি

# বিভিন্ন ধরণের পোশাক

# খাদ্য সামগ্রী যেমন পেঁয়াজ, আদা, রসুন, চাল, দুগ্ধজাত খাবার

# ইলেক্ট্রনিক পণ্য

# মোটরগাড়ি

# বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি

ভারত থেকে পণ্য আমদানির যে তালিকা এখানে দেওয়া হলো সেগুলো ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরণের পণ্য ভারত থেকে আমদানি করা হয়। তবে উপরোক্ত পণ্যগুলো বেশি পরিমাণে আমদানি করা হয়।

আরো পড়ুন –  আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন তার গাইডলাইন

ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম 

ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য আলাদা কোন নিয়ম নেই। পৃথিবীর সব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করতে একই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। তবে যেহেতু এই আর্টিকেলটি ভারত থেকে পণ্য আমদানি সংক্রান্ত তাই আমি ভারতকেই কেন্দ্র করে এটি লিখছি। কিভাবে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করবেন তা ধাপে ধাপে নিচে আলোচনা করা হলো-

১. আমদানি লাইসেন্স করা  

ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য আপনাকে প্রথমেই একটি আমদানি লাইসেন্স করতে হবে। আমদানি লাইসেন্স সংগ্রহ করার জন্য আপনার জাতীয় পরিচয়পত্র, টিআইএন, ট্রেড লাইসেন্স, চেম্বার অব কমার্সের সদস্য পদের সনদ ইত্যাদি লাগবে। আর যদি কোম্পানি গঠন করে আমদানি করতে চান তাহলে আপনাকে প্রথমেই কোম্পানির নাম নিবন্ধন করতে হবে। নাম নিবন্ধনের ৬ মাসের মধ্যে কোম্পানি গঠনের বাকি প্রক্রিয়া শেষ করতে হবে। কোম্পানি গঠন করার পর আপনাকে আমদানি লাইসেন্সের জন্য  আমদানি ও রপ্তানি প্রধান নিয়ন্ত্রকের দপ্তরের নিকট আবেদন করতে হবে।

 ২. বিক্রেতার সাথে যোগাযোগ 

আমদানি লাইসেন্স পেয়ে যাওয়ার পর আপনি ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন। পণ্য আমদানির জন্য আপনাকে বিক্রেতা খুঁজে বের করতে হবে। বিভিন্ন ভাবে আপনি বিক্রেতার সন্ধান পেতে পারেন। আপনি একজন আমদানিকারকের সাহায্য নিতে পারেন আবার চাইলে ইন্ডিয়া মার্ট বা ফ্লিপকার্টের মত প্লাটফর্ম ব্যবহার করতে পারেন। এসব প্লাটফর্মে আপনি ভারতের স্বনামধন্য রপ্তানিকারকদের খোঁজ পাবেন। 

৩. বিক্রেতার কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করা

বিক্রেতার সাথে সকল প্রকার দরকষাকষি করে আপনার কাজ হচ্ছে পণ্যের স্যাম্পল নিয়ে আসা। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কারণ আপনি স্যাম্পল দেখে পণ্যের গুনাগুণ সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবেন। তাই ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার আগে রপ্তানিকারকের কাছ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে ভুলবেন না।

৪. প্রফোরমা ইনভয়েজ সংগ্রহ করা এবং এলসি করা

প্রফোরমা ইনভয়েজ হচ্ছে রপ্তানিকারক কর্তৃক প্রস্তুতকৃত একটি ইনভয়েজ যেখানে পণ্যের সমস্ত বিবরণ থাকে যেমন পণ্যের পরিমাণ, আকার, রঙ, গুণাগুণ, প্যাকেজের সাইজ, সকল প্রকার শর্ত ইত্যাদি। এই ইনভয়েজ পাওয়ার পর আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে এবং একটি এলসি খুলতে হবে। এলসি খোলার পর বাকি কাজ হচ্ছে ব্যাংকের। ব্যাংক তাদের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার পর আপনাকে রপ্তানিকারকের কাছ থেকে পাওয়া ডকুমেন্ট সরবরাহ করবে।

আরও পড়ুন – প্রফোরমা ইনভয়েজ কি? প্রফোরমা ইনভয়েজে কি কি বিষয় থাকে?

৫. পণ্য খালাস করা

ব্যাংকের কাছ থেকে থেকে ডকুমেন্ট পাওয়ার পর আপনি সেসব ডকুমেন্ট নিয়ে চলে যাবেন স্থল বন্দরে। সেখানে আপনি সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে ভারত থেকে পাঠানো পণ্য খালাস করতে পারবেন। পণ্য বুঝে পাওয়ার পর আপনি সেসব পণ্য ট্রাকে করে নিজের গুদামে নিয়ে যেতে পারবেন।

বাংলাদেশের স্থলবন্দর

যেহেতু আপনি ভারত থেকে পণ্য আমদানি করবেন সেহেতু আপনাকে বাংলাদেশের স্থল বন্দর সম্পর্কে জানা উচিত। কারণ আপনি যদি স্থল বন্দরের অবস্থান সম্পর্কে জানেন তাহলে পণ্য আমদানি করতে সুবিধা হবে। আবার এমন হতে পারে আপনার খুব কাছেই স্থলবন্দর আছে কিন্তু আপনি না জানার কারণে ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তাই আসুন জেনে নিই বাংলাদেশের ২৪ টি স্থল বন্দরের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থল বন্দর এবং তাদের অবস্থান –

  • বেনাপোল স্থল বন্দর – শারশা,যশোর

  • বাংলাবান্ধা স্থল বন্দর – তেঁতুলিয়া,পঞ্চগড়

  • হিলি স্থল বন্দর – হাকিমপুর,দিনাজপুর

  • ভোমরা স্থল বন্দর – সাতক্ষীরা সদর

  • সোনামসজিদ স্থল বন্দর – শিবগঞ্জ,চাঁপাইনবাবগঞ্জ

  • আখাউড়া স্থল বন্দর – আখাউড়া,ব্রাম্মণবাড়িয়া

  • দর্শনা স্থল বন্দর – দামুরহুদা,চুয়াডাঙ্গা

  • ভোলাগঞ্জ স্থলবন্দর – ভোলাগঞ্জ,সিলেট

  • বুড়িমারী স্থলবন্দর – পাট গ্রাম,লালমনিহাট

  • তামাবিল স্থল বন্দর – গোয়াইনঘাট,সিলেট

ভারত থেকে কসমেটিক্স আমদানি 

ভারত থেকে যেসব পণ্য আমদানি করা হয় তার মধ্যে কসমেটিক্স আইটেম অন্যতম। বাংলাদেশ থেকে ব্যবসায়ীরা খুব সহজেই ভারতে গিয়ে যাচাই করে এসব পণ্য ক্রয় করতে পারেন। বেশিরভাগ ব্যবসায়ীরা কলকাতা বড় বাজার মার্কেট থেকেই কসমেটিক্স ক্রয় করে থাকেন। আপনি যদি একবার সেখানে গিয়ে কোন বিক্রেতার সাথে পরিচিত হতে পারেন তাহলে ভবিষ্যতে আপনাকে আর ভারতে যেতে হবে না। তার মাধ্যমেই আপনি ভারত থেকে কসমেটিক্স আমদানি করতে পারবেন। ভারত থেকে আমদানিকৃত কসমেটিক্সের মধ্যে রয়েছে মেকাপ সামগ্রী, শ্যাম্পু, লিপিস্টিক, নেলপালিশ, ফেসওয়াশ, বিভিন্ন ধরণের ক্রিম, বিভিন্ন ধরণের তেল ইত্যাদি।

ভারত থেকে শাড়ি আমদানি 

বাংলাদেশে ভারতীয় শাড়ির প্রচুর চাহিদা। আপনি চাইলে ভারতীয় শাড়ির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ভারতীয় শাড়ি দামে তুলনামূলক সস্তা তাই আপনি ভাল পরিমাণে লাভ করতে পারবেন। কলকাতার বড় বাজারে আপনি কম দামে ভাল ভাল শাড়ি পাবেন। আপনার যদি সুযোগ থাকে তাহলে কলকাতায় গিয়ে সরাসরি শাড়ি দেখে পছন্দ করে অর্ডার করতে পারেন। এসব শাড়ি ৫০০ থেকে ১০০০ টাকার মধ্যে ক্রয় করতে পারবেন।

কলকাতার পাইকারি বাজার 

ভারত থেকে আপনি পণ্য আমদানি করবেন আর কলকাতার পাইকারি বাজার সম্পর্কে জানবেন না তা কি করে হয়! আপনার যদি কলকাতার পাইকারি বাজার সম্পর্কে ভাল আইডিয়া থাকে তাহলে আপনি খুব সহজেই কলকাতায় গিয়ে পাইকারি বাজার থেকে পণ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। নিচে কলকাতার কততগুলো পাইকারি বাজার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

নিউমার্কেট – কলকাতার নিউমার্কেট হচ্ছে শত বছরের পুরনো একটি মার্কেট। এই মার্কেটে আপনি স্পব ধরণের জামাকাপড়, বাচ্চাদের খেলনা, কসমেটিক্সসহ সব ধরণের পণ্যের সমাহার দেখতে পারবেন।

বড়বাজার – ভারত থেকে যে কোন পণ্য আমদানি করতে হলে আপনাকে কলকাতার বড় বাজার সম্পর্কে জানতে হবে। এই বাজার আসলেই একটি বৃহৎ বাজারে। এই বাজারে আপনি প্রায় সব ধরণের পণ্য সুলভ মূল্যে ক্রয় করতে পারবেন। বাংলাদেশ থেকে অনেক আমদানিকারক এই বাজারের ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে।

বিরশুলহাট – জুতার জন্য এই মার্কেট বিখ্যাত। আপনি যদি জুতা আমদানি করতে চান তাহলে বিরশুলহাট একবার ঘুরে আসতে পারেন। এই মার্কেটে আপনি বাহারি ডিজাইনের জুতা দেখতে পাবেন।

গড়িয়াহাট – দক্ষিণ কলকাতায় অবস্থিত একটি ব্যস্ত ব্যবসা কেন্দ্র হচ্ছে গড়িয়াহাট। এখানে সব ধরণের ব্র্যান্ডের পণ্য আপনি পাবেন। এছাড়া এই এলাকায় ফুটপাত জুড়ে রয়েছে বিভিন্ন পণ্যের ছোট ছোট দোকান।

হাতিবাগান – হাতিবাগানের অবস্থান হচ্ছে উত্তর কলকাতায়। যারা শাড়ির ব্যবসা করতে চান তারা এই মার্কেটে যেতে পারেন। এই মার্কেটে আপনি বিভিন্ন ধরণের শাড়ি পাবেন যেমন – সিল্ক, তাঁত, ওড়িশার সম্বলপুরী, কটকি ইত্যাদি।

রবীন্দ্র সরণি – এটি একটি প্রাচীন বাজার। এই বাজারে আপনি বিয়ের জামাকাপড়, পাজামা, কুর্তা, শেরওয়ানি ইত্যাদি পাবেন।

বউবাজার – বউ বাজারে আপনি সব ধরণের আসবাবপত্র এবং গহনার দোকান খুঁজে পাবেন। তাই যারা আসবাব এবং গহনা কিনতে চান তারা এই মার্কেটে আসতে পারেন।

চাঁদনি মার্কেট – ইলেক্ট্রনিক্স পণ্যের জন্য এই মার্কেট বিখ্যাত। এই মার্কেটে আপনি প্রচুর ইলেক্ট্রনিক্সের দোকান পাবেন। তাই আপনি যদি ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য ক্রয় করতে চান তাহলে চাঁদনি মার্কেট ঘুরে আসতে পারেন।

পরিশেষে

ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার নিয়ম সম্পর্কে আপনারা ইতোমধ্যে অবগত হয়েছেন। শুধু তাই নয় ভারত থেকে কোন কোন পণ্য বাংলাদেশে বেশি আমদানি করা হয় এবং পাইকারি মার্কেটের অবস্থান কোথায় সেসব সম্পর্কে আপনি ভাল ধারণা পেয়েছেন। আশা এই আর্টিকেল পড়ার পর আপনি খুব সহজেই ভারত থেকে পণ্য আমদানি করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবেন।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here