মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া

আমাদের দেশের মেয়েদের ব্যবসায়ে সম্পৃক্ততা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এজন্য অনেকেই মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান।

আসলে বর্তমান বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে একজনের আয়ে সংসার চালানো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই মেয়েরাও সংসারের খরচ মেটানোর জন্য ব্যবসায় যুক্ত হতে চাচ্ছে। আবার অনেক মেয়ে আর্থিক স্বাধীনতার জন্য ব্যবসায় আসতে চাচ্ছে। একেক জন একেকে কারণে ব্যবসায় আসতে চাচ্ছে।

তবে যে কারনেই আপনি ব্যবসা শুরু করুন না কেন যে ব্যবসা করবেন সেই ব্যবসা সম্পর্কে ভাল করে জেনে তারপর শুরু করুন। একথা বলছি কারণ আমরা প্রায়ই দেখি অনেকেই কিছু না জেনেই ব্যবসা শুরু করে দেয়। কিন্তু এর ফলাফল ভাল হয় না। তাই সবকিছু জেনে বুঝে প্রস্তুতি নিয়ে তারপর ব্যবসা শুরু করুন।

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া 

১. খাবার বিক্রি করা 

যদিও এটা খুব কমন তারপরও মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে খাবার বিক্রি করাকে আমি এক নাম্বারেই রাখলাম। এর কারণ হচ্ছে আমাদের দেশের প্রায় সব মেয়ে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রান্নাতে খুব দক্ষ থাকে। তাই এই দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে মেয়েরা ঘরে বসে থেকেই ব্যবসা করে আয় করতে পারেন।

ফেসবুকে আজকাল অনেক মেয়ে পেইজ খুলে নিজেদের খাবারের বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। নিজের আইডি থেকেও মুখরোচক খাবারের রেসিপি শেয়ার করছে। এভাবে তারা নিজেদের একটি গ্রাহক শ্রেণি তৈরি করছে।

তাহলে আপনিও যদি খাবার সাপ্লাইয়ের ব্যবসা শুরু করতে চান তাহলে এভাবে আপনিও আপনার গ্রাহক শ্রেণি তৈরি করতে পারবেন। এছাড়া বিভিন্ন অফিসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, কারণ একটি অফিসে অনেক কর্মী থাকে। আপনি যদি কয়েকটা অফিসে নিয়মিত খাবার সাপ্লাই দেওয়ার কাজ পেতে পারেন তাহলে ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন।

২. অনলাইনে পোশাক বিক্রি করা  

অনেক মহিলা আছে যারা সুন্দর সুন্দর ডিজাইনের পোশাক তৈরি করতে পারে। আর যারা যুগের সাথে তাল মিলিয়ে সুন্দর সুন্দর পোশাক তৈরি করতে পারে তাদের পোশাক বিক্রি হয় বেশি।

আপনি যদি পোশাক তৈরির কাজ জানেন তাহলে তো ভালই। আর যদি না জানেন তাহলে অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা পোশাক ডিজাইনিং এর উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে, তাদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে কাজ শুরু করে দিতে পারেন।

৩. ম্যাকআপ কনসালটেন্সি সার্ভিস

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া

মেয়েরা প্রকৃতিগতভাবে সাজতে পছন্দ করে। বিয়ে, জন্মদিন, পার্টি হলে তো কথাই নেই। তখন অনেক সময় নিয়ে সাজতে হবে।

আসলে সাজার বিষয়টাতে অনেক সৃজনশীলতা আছে। এছাড়া বিভিন্ন উপাদান ব্যবহার করে কিভাবে নিজেকে রুচিশীল হিসেবে মানুষের কাছে উপস্থাপন করা যায় সেজন্য ম্যাকআপ বিষয়ে অনেক কিছু জানার আছে।

তাই আপনি যদি একজন ম্যাকআপ আর্টিস্ট হয়ে থাকেন তাহলে এই বিষয়ে মানুষকে অর্থের বিনিময়ে পরামর্শ দিতে পারেন। এর পাশাপাশি ম্যাকআপ করার জন্য যেসব উপাদান লাগে সেগুলোর ব্যবসাও করতে পারেন।

এই ধরণের সার্ভিস ব্যবসা শুরু করার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনাকে সক্রিয় হতে হবে। আপনি যে সাজসজ্জায় খুব পারদর্শী সেটা আগে মানুষকে জানাতে হবে।

৪. চাইল্ড কেয়ার সেন্টার 

চাইল্ড কেয়ার সেন্টার

আমাদের দেশে চাকরিজীবী মায়ের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। যার কারণে শিশুদের লালন পালন করা চাকরিজীবী মায়েদের জন্য খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় চাইল্ড কেয়ার সেন্টার হচ্ছে তাদের অন্যতম ভরসা।

আপনার বাড়ি যদি এমন এলাকায় হয়ে থাকে যেখানে চাকরিজীবী পরিবারের সংখ্যা খুব বেশি তাহলে আপনি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার দিতে পারেন। আপনার বাড়ির একটা রুমে শিশুদের রেখে তাদের দেখাশুনা করতে পারেন। আপনি একা না পারলে শিশুদের দেখাশুনা করার জন্য কিছু মহিলা নিয়োগ দিতে পারেন।

৫. ব্লগ বিজনেস

আমাদের দেশের মেয়েদের মধ্যে আইটি স্কিল তুলনামূলক কম। বেশিরভাগ মেয়েদের প্রযুক্তির প্রতি আগ্রহ খুব কম। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রযুক্তি জ্ঞান ছাড়া ব্যবসাতে আপনি খুব বেশি সফল হতে পারবেন না।

আপনার যদি কম্পিউটার চালানোয় অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে আপনি ব্লগ বিজনেস করতে পারেন। একটি ব্লগ তৈরি করে সেখানে নিয়মিত লেখালেখি করুন। তারপর ভিজিটরদের সামনে আপনি প্রাসঙ্গিক পণ্যের বিজ্ঞাপন দিন। এভাবে আপনার ব্যবসার বিক্রি বাড়াতে পারবেন। এছাড়া আপনার ব্লগে সরাসরি অন্য প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে বা অ্যাডসেন্স থেকে আয় করতে পারবেন।

প্রফেশনাল ব্লগ তৈরি এবং ডোমেইন হোস্টিং এর জন্য আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা যুক্তিসঙ্গত মূল্যে আপনাকে প্রফেশনাল ব্লগ তৈরি করে দিতে পারব।

৬. কোচিং সেন্টার 

কোচিং সেন্টার দিয়ে আজকাল অনেকেই প্রচুর আয় করছে। যারা একটু ভাল পড়াতে পারে তাদের সুনাম খুব দ্রুতই ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে ছড়িয়ে যায়। যার কারণে যেসব কোচিং সেন্টারে ভাল টিচার থাকে সেসব কোচিং সেন্টারেই বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রী পড়তে যায়।

আপনিও চাইলে নিজের বাড়িতে বা এলাকার কোন বাড়ির একটা রুম ভাড়া নিয়ে কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন। তবে কোচিং এ পড়ানোর আগে টিউশনি করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। টিউশনির অভিজ্ঞতা ছাড়া কোচিং এ ক্লাস নেওয়া অনেক কঠিন।

৭. অনলাইন কোর্স বিক্রি 

অনলাইনে কোর্স বিক্রি করে আয় করা হতে পারে একটি লাভজনক মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া। বর্তমানে অনলাইন কোর্সের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে করোনার কারণে মানুষ এখন ই-লার্নিং এ জোর দিয়েছে।

একটি ভাল ক্যামেরা আর একটি কম্পিউটার হলেই অনলাইন কোর্স ব্যবসা শুরু করতে পারবেন। আপনি যে বিষয়ে দক্ষ সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করবেন এবং আপনার ওয়েবসাইট বা ফেসবুক পেইজের মাধ্যমে বিক্রি করবেন। আবার udemy এর মত অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলোতে আপনি কোর্স বিক্রি করে আয় করতে পারবেন। 

৮. ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট

ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট

বিশ্বব্যাপী ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টদের চাহিদা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। যারা দূর থেকে অনলাইনে কোম্পানির বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে তাদেরকে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট বলা হয়। ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টরা কোম্পানির বিভিন্ন ধরণের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করে থাকে যেমনঃ অ্যাপয়েনমেন্ট শিডিউল ঠিক করা, কোম্পানির ক্লায়েন্টদের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা, ইমেইল গ্রহণ ও পাঠানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম পরিচালনা করা, ইভেন্ট মেনেজ করা, রিপোর্ট তৈরি করা ইত্যাদি।

আপনি যদি নিজেকে যোগ্য মনে করেন তাহলে ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ শুরু করতে পারেন। যদি আপনি এই খাতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারেন তাহলে নিজেই ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট সাপ্লাই প্রতিষ্ঠান খুলতে পারবেন। আপনার অধীনে প্রশিক্ষিত ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্টরা থাকবে যাদের আপনি বিভিন্ন ক্লায়েন্টের ভার্চুয়াল অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিয়োগ দেবেন।

আরো পড়ুনঃ

৯. সোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট 

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে সোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট দারুণ একটি আইডিয়া। সোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট এর কাজ করতে হলে আপনাকে সামাজিক সোশাল মিডিয়া এক্সপার্ট হতে হবে। ফেসবুক, টুইটার, পিন্টারেস্ট, ইউটিউব, ইন্সটাগ্রাম ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানতে হবে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে দক্ষ কিছু ব্যক্তিকে সাথে নিয়ে শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা। ফেসবুকে পেইজ খুলে আপনার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে প্রচারনা চালাতে পারেন। ফ্রিলেন্সিং ওয়েবসাইটগুলো থেকেও কাজ নিতে পারবেন।

১০. বুটিক শপ

নারী উদ্যোক্তাদের একটা বড় অংশই বুটিক শপের মাধ্যমে ব্যবসায়ের জগতে এসেছে। এই ব্যবসাটি মূলত নারী উদ্যোক্তাদের জন্যই। কারণ নারীরা বিভিন্ন ডিজাইনের কাপড় তৈরিতে এক্সপার্ট।

আপনি যদি একজন ভাল ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে বুটিক ব্যবসায় নামতে পারেন। ঘরে বসে কাপড় ডিজাইন করবেন আর শো-রুমে বিক্রি করবেন। ব্যবসা যদি ভাল চলে তাহলে কিছু কর্মী নিয়োগ দিবেন যাতে গ্রাহকদের চাহিদা অনুযায়ী জামাকাপড় সাপ্লাই দিতে পারেন।

১১. কুটির শিল্প ব্যবসা

কুটির শিল্প হচ্ছে হাতে তৈরি পণ্য উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করা। এখানে কোন যন্ত্রের ব্যবহার নেই। হাতের কারিশমাতে সব পণ্য তৈরি করা হয়। এই ধরণের ব্যবসা শুরু করতে খুব কম পুঁজি লাগে।

কুটির শিল্পের মধ্যে রয়েছে শীতল পাটি, বিভিন্ন মাটির তৈরি তৈজসপত্র, বেতের চেয়ার-টেবিল, ঝুড়ি, ঝাড়ু, পাখা, টুপি ইত্যাদি। এসব পণ্যের চাহিদা সৌখিন মানুষ থেকে শুরু করে গ্রামের দরিদ্র মানুষ পর্যন্ত সবার কাছেই আছে।

আপনি যদি এ ধরণের পণ্য তৈরি করতে পারেন তাহলে আপনার দ্বারা এই ব্যবসা শুরু করা সম্ভব। কুটির পণ্য তৈরি করা অনেক সময়ের ব্যাপার তাই একা পারবেন না। আপনার সাথে আরও কয়েকজন মহিলাকে নিয়ে এসব পণ্য তৈরি কাজ শুরু করতে পারেন।

১২. ফ্রিল্যান্সিং

মেয়েদের ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ফ্রিলেন্সিংকে রাখার কারণ হচ্ছে এর মাধ্যমে আপনি ঘরে বসেই আয় করতে পারবেন। তবে এটাও ঠিক অনেক আইটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হচ্ছে ফ্রিলেন্সার। ফ্রিলেন্স মার্কেটে কাজ করতে করতে যখন আপনার প্রচুর ক্লায়েন্ট হয়ে যাবে তখনই আপনি একটি টিম গঠন করে একটি আইটি প্রতিষ্ঠান দিতে পারবেন।

একজন ফ্রিলেন্সার বিভিন্ন ধরণের কাজ করে থাকে। যেমনঃ

  • গ্রাফিক্স ডিজাইন,

  • কন্টেন্ট রাইটিং,

  • ডিজিটাল মার্কেটিং,

  • ভিডিও এডিটিং

  • অ্যানিমেশন

  • প্রোগ্রামিং

  • ওয়েবসাইট ডেভেলপমেন্ট

  • এসইও সার্ভিস

  • অ্যাপ ডেভেলপমেন্ট

  • গেইম তৈরি

  • সোশাল মিডিয়া ম্যানেজমেন্ট

  • বিজনেস ম্যানেজমেন্ট

  • মার্কেট রিসার্চ

  • কনসালটেন্সি

  • আর্টিকেল রাইটিং

  • ট্রান্সলেশন

  • প্রুফরিডিং

  • ডেটা এন্ট্রি

আপনি যে ধরণের কাজে দক্ষ সেই ধরণের কাজ করে ফ্রিলেন্সিং ক্যারিয়ার শুরু করতে পারেন। যদি দক্ষতা বা জানাশোনা কম থাকে তাহলে প্রশিক্ষণ নিন। কারণ প্রশিক্ষণ ছাড়া কোন রকমে জেনে যদি মার্কেটে প্রবেশ করতে চান তাহলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম থাকবে। আর যদি ভাল করে জেনে ফ্রিলেন্সিং ক্যারিয়ার শুরু করলে আপনি সফল হতে পারবেন একথা বলা যায়।

 

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here