আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন

ব্যাংক শুধু একজন আমদানিকারকে আমদানির পূর্বেই অর্থায়ন করবে ব্যাপারটা এমন নয়। আমদানি পরবর্তী সময়েও ব্যাংক আমদানিকারককে অর্থায়ন করে থাকে। এর মাধ্যমে গ্রাহক তার আমদানি কার্যক্রম আরও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারে।

আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন কিভাবে করা হয়? 

আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন বিভিন্নভাবে হতে পারে। বিভিন্ন ব্যাংক বিভিন্নভাবে আপনাকে অর্থায়ন করতে পারে। তবে সাধারণত দুটি উপায়ে আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন হয়ে থাকে,যেমন –

১. আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে অর্থায়ন
২. ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ঋণ/বিনিয়োগ

আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে অর্থায়ন 

আমদানির বিপরীতে যখন ব্যাংকের কাছে সকল ডকুমেন্ট চলে আসে তখন ব্যাংক সেগুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করে থাকে। যদি ব্যাংক সকল ডকুমেন্ট ঠিক আছে বলে নিশ্চিত হয় তখন আমদানিকারকে বিল পরিশোধ করে পণ্য ছাড় করাতে বলে।

আরও পড়ুনঃ

আমদানিকারকে পণ্য পৌঁছানোর আগেই বিল পরিশোধ করে ডকুমেন্ট ছাড় করাতে হয়। তবে অনেক সময় দেখা যায় অর্থ সংকটের কারণে আমদানিকারক ঠিক সময়ে বিল পরিশোধ করে ডকুমেন্ট ছাড় করাতে পারে না। তখন আমদানিকারক চাইলে ব্যাংকের কাছে আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে ঋণের আবেদন করতে পারে। তখন ব্যাংক আবেদনকারীর পণ্য খালাসে যে খরচ হবে সেসব খরচের হিসাব করে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংক বিভিন্ন খরচের হিসাব চেয়ে থাকে, যেমন –

ইনভয়েজ মূল্য
– কাস্টমস শুল্ক
– বিক্রয় কর
– ভ্যাট
– ক্লিয়ারিং এজেন্ট খরচ
– পরিবহণ খরচ
– বিলম্ব শুল্ক ইত্যাদি।

ব্যাংক এসব খরচের হিসাব করে আমদানিকারকের মার্জিনকৃত অর্থের সাথে তুলনা করবে। এছাড়া ব্যাংক পণ্যের পরিমাণ এবং গুনাগুণ পরীক্ষা করবে। সবকিছু করার পর ব্যাংক সন্তুষ্ট হলে ব্যাংক আমদানিকারককে তার আমদানিকৃত পণ্যের বিপরীতে ঋণ/বিনিয়োগ অনুমোদন দিবে।

তারপর ব্যাংক আমদানিকৃত পণ্য তাদের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে রাখবে এবং নিয়মিত সেসব পণ্য পর্যবেক্ষণ করবে। আপনি কি পরিমান পণ্য স্টোরেজ থেকে ব্যবহার করছেন সে বিষয়ে নিয়মিত স্টক রিপোর্ট তৈরি করবে।

ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ঋণ/বিনিয়োগ

আমদানি পরবর্তী অর্থায়ন গুলোর মধ্যে ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ঋণ অন্যতম।

ট্রাস্ট রিসিপ্ট হচ্ছে একটি ডকুমেন্ট যেখানে ব্যাংক আমদানি করা পণ্য আমদানিকারকের জিম্মায় দেওয়ার আগে বিভিন্ন শর্ত প্রদান করে। আমদানিকারক যদি ট্রাস্ট রিসিপ্টে বর্ণীত শর্তসমূহ মেনে নিয়ে স্বাক্ষর করে তখন ব্যাংক আমদানি করা পণ্য আমদানিকারকের গুদামে রাখার ব্যাপারে সম্মতি প্রদান করে।

এই ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ব্যাংক আমদানিকারকে ঋণ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে ব্যাংকের খুব বিশ্বস্ত গ্রাহকরাই এই ধরণের ঋণসুবিধা পেয়ে থাকে। বিশ্বস্ত না হলে ব্যাংক এই ধরণের সুবিধা কখনও প্রদান করবে না। কারণ ব্যাংক যদি নিজের গুডাউনে পণ্য না রেখে আমদানিকারকের জিম্মায় দিয়ে তখন আমদানিকারক ব্যাংকের সাথে প্রতারণা করতে পারে। এজন্য আপনি ব্যাংকের কাছে বিশ্বস্ত গ্রাহক হয়ে থাকেন তাহলে আপনি ট্রাস্ট রিসিপ্টের বিপরীতে ঋন/বিনিয়োগের আবেদন করতে পারেন।

পরিশেষে

আমদানি পরবর্তী অর্থয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ অনেকেই পণ্য খালাসের আগে অর্থ সংকটে ভোগে। কিন্তু আপনার যদি এই বিষয়ে জানা থাকে তাহলে আপনি সহজেই এই পদ্ধতিতে ব্যাংকের কাছে ঋণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এর ফলে আপনার অর্থসংকট দূর হবে এবং সুন্দরভাবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here