ডিলারশিপ ব্যবসা

বর্তমানে চাহিদাসম্পন্ন এবং সময়োপযোগী ব্যবসার মধ্যে ডিলারশিপ ব্যবসা অন্যতম। অনেকে হয়তো নাম শুনেছেন বা বিভিন্ন জায়গায় ডিলারশিপ নিয়োগের ব্যাপারে বিজ্ঞাপন দেখেছেন।

কিন্তু স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বুঝতে পারেননি যে এটার প্রক্রিয়াটা আসলে কি এবং কিভাবেই বা করে! আপনি হয়তো জেনে আনন্দিত হবেন যে, ডিলারশিপ ব্যবসা একটি অধিক লাভজনক ব্যবসা এবং এ ব্যবসাটি তে ঝুঁকির পরিমাণ অন্যান্য ব্যবসার চেয়ে কম!

কারণ, ডিলারশিপ ব্যবসায়ে পণ্যের প্রচারণা করা বা মানুষের কাছে এর বেনিফিট তুলে ধরার প্রয়োজন পড়েনা। তবে একেবারে অখ্যাত কোম্পানি হলে আপনাকে তাদের পণ্যের মার্কেটিং করতে হবে। যে পণ্য নিয়ে ডিলারশিপ ব্যবসা করা হয়, তা পরিবহন করা কিংবা পণ্যের ত্রুটি বিচ্যুতি হলে তার দায় দায়িত্ব কোম্পানির।

এছাড়া কেউ যদি এ ব্যবসায়ে নামার পর তা আর করতে না চায়, তাহলে নির্দিষ্ট শর্তে মাল ফেরতের মাধ্যমে বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত পাওয়া যায়। ফলে ক্ষতির সম্ভাবনা কম থাকে।

ডিলারশিপ ব্যবসা কি?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে, ডিলারশিপ ব্যবসা হলো, চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের এলাকাভিত্তিক বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া।কোম্পানি যাদেরকে ডিলার নিয়োগ দেয়, তাদেরকে অল্প দামে প্রোডাক্ট বা মাল সরবরাহ করে থাকে।

কোম্পানি যাদেরকে ডিলারশিপ দেয়, তারা সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় অফিস বা দোকানে তাদের পণ্যগুলো মানুষের কাছে পাইকারি ও খুচরা মূল্যে বিক্রী করে।

যিনি এ কাজগুলো করেন তাকে ডিলার বলা হয়। একজন ডিলারকে কোম্পানির পণ্যকে সুষ্ঠুভাবে এলাকাভিত্তিক বন্টন করতে হয়।

এ কাজে নামার পূর্বে আপনার প্রয়োজন ব্যবসায়ীক ধারণা, ক্রেতাদের কাছে পণ্য বিক্রয়ের কৌশল বা মার্কেটিং প্ল্যান, ধৈর্য এবং উপস্থিত বুদ্ধি। এছাড়াও কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা হলে সেটা সামাল দিয়ে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার মন মানসিকতা থাকা জরুরি।

উদাহরণস্বরুপ, একজন ব্যক্তি আপনার থেকে খুচরা কিছু পণ্য কিনলো কিন্তু দেখা গেলো যে তাতে গুরুতর সমস্যা রয়েছে। তাহলে আপনাকে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারটি খতিয়ে দেখতে হবে এবং উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।

ডিলারশিপ ব্যবসা প্রক্রিয়ায় কোম্পানি আপনাকে যে মাল বা পণ্য দিবে, তা বিক্রীর মাধ্যমে আপনি কমিশন পাবেন। উল্লেখ্য যে, একজন মানুষ একাধিক কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে পারে। এমনকি স্বল্প পরিমাণে পণ্য নিয়েও ব্যবসা শুরু করতে পারে।

আপনি যদি এই ব্যবসায়টি করতে চান, তাহলে কোম্পানির সাথে আপনাকে যোগাযোগ করে আবেদন করতে হবে। তারা যদি রাজি হয়, তাহলে আপনি ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। চলুন তা জেনে নিই।

আরো পড়ুনঃ ১৫ টি লাভজনক ডিলারশিপ ব্যবসার আইডিয়া

ডিলারশিপ পেতে যা যা থাকা জরুরি

ডিলার হতে হলে আপনাকে আবেদন করতে হবে কোম্পানির নিকট। এক্ষেত্রে যে ডকুমেন্টগুলো লাগবে, তা হলোঃ

  • ট্রেড লাইসেন্স

  • জাতীয় পরিচয়পত্র

  • যে কোম্পানির ডিলার হতে চান তাদের নিকট রেজিস্ট্রেশন

  • নিজের ফার্ম বা এজেন্সি/অফিস

উপর্যুক্ত ডকুমেন্টসের সাথে আপনার অফিসের অবস্থান, আয়তন, কর্মচারির সংখ্যা, কি প্রোডাক্ট নিতে চান, কি পরিমাণে নিতে চান, পরিবহণ ব্যবস্থা প্রভৃতি কোম্পানিকে জানাতে হবে।

তবে ছোট পরিসরে কোনো কোম্পানির ডিলারশিপনিতে চাইলে ট্রেড লাইসেন্স এবং নিজের ফার্ম/এজেন্সি ছাড়াই ডিলার হিসেবে নিয়োগ পাওয়া যায়।

তবে সব কোম্পানি নয়। এক্ষেত্রে তাদের সাথে কথা বলে জেনে নিতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ বর্তমানে জনপ্রিয় ২০ টি উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া

কিভাবে ডিলারশিপ পাবেন

ডিলারশিপ পাওয়ার সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে আপনি যে কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে চান সেই কোম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করা। তাই আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে স্থানীয় প্রতিনিধি খুঁজে বের করা। তাদের সাথে যোগাযোগ করে ডিলারশিপ নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করা। তাদের সাথে এই ব্যাপারে নিয়মিত যোগাযোগ রাখবেন। তারাই আপনাকে কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেবে।

আরেকটা পদ্ধতি হচ্ছে কোম্পানি যখন বিভিন্ন মাধ্যমে ডিলারশিপের বিজ্ঞাপন দেয় তখন কোম্পানির চাহিদা অনুযায়ী যদি আপনার সক্ষমতা থাকে তাহলে আপনি তাদের নিকট যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আবেদন করতে পারেন। আপনার আবেদন যদি তারা গ্রহণ করে তাহলে আপনার সাথে যোগাযোগ করা হবে। তারপর সবকিছু ঠিক থাকলে আপনি কোম্পানির সাথে চুক্তি করবেন।

কোম্পানির চুক্তিপত্রে বিভিন্ন বিষয় উল্লেখ থাকবে যেমন আপনি যেসব পণ্যের ডিলারশিপ নিতে চান সেসব পণ্যের তালিকা, ডিলার কমিশন, পণ্যের মার্কেটিং, পণ্য পরিবহণ সংক্রান্ত বিষয় ইত্যাদি।

ডিলারশিপ ব্যবসায় সফলতার জন্য যা আপনার জেনে রাখা দরকার

  • টিভিতে বা সোশ্যাল সাইটে বিভিন্ন রকম বিজ্ঞাপন দেখে একদল মানুষ ডিলারশিপ ব্যবসা করতে নেমে প্রতারণার শিকার হয়েছে। তাই সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত বিশ্বস্ত কোম্পানি ছাড়া অন্য কোনো কোম্পানির ডিলারশিপ নেয়া থেকে বিরত থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।

  • এছাড়া ডিলারশিপ ব্যবসার জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সঠিক স্থান নির্বাচন। যে স্থানে যে পণ্যের চাহিদা নেই অথবা লোকসমাগম কম – এমন স্থানে ব্যবসায় করাটা লসের কারণ হতে পারে। এজন্য এ ব্যাপারটা খেয়াল রাখা জরুরি।

  • ডিলারশিপ ব্যবসার জন্য বিভিন্ন কোম্পানির চাহিদা বিভিন্ন রকম। সাধারণত ছোট কোম্পানির ডিলারশিপের জন্য তাদের নিকট সিকিউরিটি হিসেবে ৩০-৪০ হাজার টাকার মতো জমা রাখতে হয়। বড় কোম্পানির ক্ষেত্রে এই অঙ্ক ৪০-৫০ লাখের মতো হতে পারে।

  • যেসব কোম্পানি তুলনামূলক বড়, তাদের সিকিউরিটির টাকা টাও একটু বেশি হয়। এই সিকিউরিটির টাকা আবার তারা পরবর্তীতে ফেরত দিয়ে দেয়। এ ব্যাপারগুলো ডিলারশিপ নেয়ার পূর্বেই ভালো করে জেনে নিবেন।

  • ডিলারশিপ ব্যবসার জন্য কোম্পানি অল্প দামে ব্যবসায়ী বা ডিলারকে মাল দিয়ে থাকে। এ মালের সর্বমোট টাকার অর্ধেক অগ্রীম দিয়ে মাল আনতে হয় এবং বাকি টাকা পরবর্তীতে পরিশোধ করতে হয়।

ডিলারশিপ ব্যবসার জন্য কি পরিমাণ মূলধন লাগতে পারে? 

উত্তর হলো – এটা আপনার ব্যবসায়ের ধরণ অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। একটি ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে সর্বনিম্ন ২ লক্ষ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক কোটি টাকার মূলধনের প্রয়োজন হতে পারে। তবে আপনি নতুন হলে অবশ্যই অল্প বিনিয়োগে কাজ শুরু করবেন। সেটা দামি প্রোডাক্ট হোক আর কমদামি প্রোডাক্টই হোক।

ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে দুটি খাতে খরচ করতে হবে –

১. সিকিউরিটি মানি

২. পণ্য ক্রয়ের জন্য খরচ

১. সিকিউরিটি মানিঃ আপনি যখন কোন কোম্পানির ডিলারশিপ নিতে যাবেন তখন আপনাকে সেই কোম্পানিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ সিকিউরিটি মানি হিসেবে জমা জমা দিতে হবে। ডিলারশিপ নেওয়ার জন্য এটি একটি বিধান। কোম্পানিগুলো তাদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এই অর্থ নিয়ে থাকে। তবে এই টাকা আপনাকে একেবারে দিয়ে দিতে হবে না। তাদের সাথে আপনার চুক্তি শেষ হয়ে গেলে আপনি সেই সিকিউরিটি মানি ফেরত পাবেন। কোম্পানি ভেদে এই সিকিউরিটি মানি ভিন্ন হয়ে থাকে। ছোট কোম্পানি হলে আপনি ৩০-৪০ হাজার টাকা দিয়েও ডিলারশিপ পেতে পারেন আবার বড় কোম্পানি হলে ৪০-৫০ লাখ টাকাও লাগতে পারে। যেহেতু বড় কোম্পানির ডিলারশিপের চাহিদা বেশি এবং তারা সাধারণত আর্থিকভাবে ভাল অবস্থানে থাকা ব্যবসায়ীদেরই ডিলারশিপ দিতে চায় তাই তারা বেশি সিকিউরিটি মানি নিয়ে থাকে।

২. পণ্য ক্রয়ের জন্য খরচঃ ডিলারশিপ ব্যবসা শুরু করতে হলে আপনাকে পণ্যের দাম পরিশোধ করতে হবে। কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে পুরো দাম পরিশোধ করতে হতে পারে আবার কোন কোম্পানির ক্ষেত্রে একটা অংশ পরিশোধ করতে হতে পারে। এটা মূলত যখন ব্যবসা শুরু করা হয় তখন প্রথমদিকে আগেই দাম পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু আপনি যখন কোম্পানির আস্থা অর্জন করে ফেলবেন তখন কোম্পানি আপনাকে বাকীতেই পণ্য সরবরাহ করবে। আপনি পণ্য বিক্রি করে তারপর পণ্যের দাম পরিশোধ করবেন।

পরিশেষে

ধৈর্য, সততা ও পরিশ্রম করে করতে পারলে ডিলারশিপ ব্যবসা করে লাখপতি থেকে শুরু করে কোটিপতি হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। তাই আপনি সুচিন্তিত পরিকল্পনা করে এবং যথেষ্ট পরিমাণ জ্ঞান নিয়ে ডিলারশিপ ব্যবসায় নেমে যেতে পারেন। আপনার সফলতা কামনা করি।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here