বৈদেশিক বাণিজ্য বা আন্তঃসীমান্ত বাণিজ্যে ডকুমেন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই একজন নব্য আমদানি-রপ্তানিকারকে বৈদেশিক বাণিজ্যে যেসব ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয় সেসব সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানতে হবে। শুধু নব্য ব্যবসায়ী নয় পুরাতন ব্যবসায়ীদের মধ্যেও অনেকেই এসব ডকুমেন্ট সম্পর্কে ভালভাবে জানেন না। যার কারণে তারা ডকুমেন্টশনের কাজ ভালভাবে করতে পারেন না। অন্যদের দিয়ে এসব কাজ করাতে গিয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে থাকেন। ডকুমেন্ট সম্পর্কে ভাল জ্ঞান থাকলে ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি তিনি দক্ষতার সাথে বৈদেশিক বাণিজ্য করতে পারতেন।
বৈদেশিক বাণিজ্যে যেসব দলিল ব্যবহার করা হয়
প্রফোরমা ইনভয়েজ
বৈদেশিক বাণিজ্যে যেসব দলিল ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে প্রফোরমা ইনভয়েজ অন্যতম। প্রফোরমা ইনভয়েজ হচ্ছে এমন একটি ডকুমেন্ট যাতে বিক্রেতা পণ্যের বিবরণ, পরিমাণ, গুনাগুণ এবং দাম উল্লেখ করে ক্রেতার নিকট প্রেরণ করে। ক্রেতা এই ইনভয়েজ পাওয়ার পর সেটি ব্যাংকে নিয়ে যায় এবং এটি ব্যবহার করে এলসি খুলে।
বিস্তারিত পড়ুন –প্রফোরমা ইনভয়েজ কি? প্রফোরমা ইনভয়েজে কি কি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে?
কমার্শিয়াল ইনভয়েজ
রপ্তানিকারক পণ্য জাহাজীকরণের সময় পণ্যের বিবরণ, জাহাজের নাম এবং নাম্বার, পণ্যের দাম এবং পরিমাণ, এলসি নাম্বার, যে বন্দর থেকে পণ্য জাহাজীকরণ করা হয়েছে এবং যে বন্দরে পণ্য খালাস হবে ইত্যাদি উল্লেখ করে যে ইনভয়েজ তৈরি করে তাকে কমার্শিয়াল ইনভয়েজ বলে। কমার্শিয়াল ইনভয়েজ তৈরি করে রপ্তানিকারক সেটি আমদানিকারকের ব্যাংকে পাঠিয়ে দেয়। পণ্য বন্দর থেকে খালাস করার জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট।
এলসি
বৈদেশিক বাণিজ্যে যেসব ডকুমেন্ট ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে এলসি সম্পর্কে আপনাকে জানতেই হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্ট। এর মাধ্যমে আমদানিকারকের ব্যাংক রপ্তানিকারককে পেমেন্ট পরিশোধ করার নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে। তবে এক্ষেত্রে রপ্তানিকারককে অবশ্যই রপ্তানি সংক্রান্ত সকল শর্ত পূরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন – এলসি কি? এলসির সাথে জড়িত পক্ষসমূহ কারা?
বিল অব লেডিং (Bill of Lading)
জাহাজ কর্তৃপক্ষ বা তাদের পক্ষে যে এজেন্ট থাকে তাদের দ্বারা বিল অব লেডিং ইস্যু হয়ে থাকে। এই ডকুমেন্ট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই ডকুমেন্টের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় পণ্যটি নির্দিষ্ট জাহাজের মাধ্যমে এসেছে।
বিল অব লেডিং কিছু বিষয় নিশ্চিত করে, যেমন –
১. এই ডকুমেন্টের মাধ্যমে আপনি পণ্যের টাইটেল সম্পর্কে জানতে পারবেন।
২. এর মাধ্যমে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন একটি পরিবহন কোম্পানি আপনার পণ্যটি গ্রহন করেছে এবং তাদের জাহাজ/বিমান/ট্রাকে পণ্যটি পরিবহন করেছে।
৩. এই ডকুমেন্টের মাধ্যমে আপনি যে দেশের বন্দর থেকে পণ্যটি জাহাজীকরণ করা হয়েছে সেটি সম্পর্কে জানতে পারে।
বিল অব লেডিং এ যেসব বিষয় থাকতে হবে –
-
বিল অব লেডিং অবশ্যই জাহাজের মাস্টার বা এজেন্ট দ্বারা স্বাক্ষরিত হতে হবে।
-
বিল অব লেডিং এ তারিখ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আপনাকে তারিখের বিষয়টা ভালভাবে খেয়াল করে দেখতে হবে।
-
পোর্ট অব লেডিং এ জাহাজ ছাড়ার বন্দর, পণ্য খালাসের বন্দর, কোসাইনি, নোটিফাই পার্টি ইত্যাদি বিষয় বিল অব লেডিং এ ঊল্লেখ থাকবে।
-
বিল অব লেডিং অবশ্যই নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে তৈরি করতে হয় এবং এটি কোসাইনি ব্যাংকের অনুকূলে এনডোর্স করা হয়।
-
জাহাজ ভাড়া অগ্রিম নাকি গন্তব্য বন্দর থেকে প্রদান করা হবে কিনা সেটি উল্লেখ থাকবে।
-
বিল অব লেডিং এ পণ্য সম্পর্কে যে বর্ণনা দেওয়া থাকে তা অবশ্যই এলসিতে দেওয়া শর্তের সাথে মিল থাকতে হবে।