অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন? তাহলে আপনার জন্যই আজকের এই লেখা।

আমাদের মধ্যে অনেকের ধারণা ব্যবসা করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এই চিন্তা করে আমরা ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও কোন ব্যবসায়ের উদ্যোগ গ্রহণ করতে সাহস পাই না।

কিন্তু আপনি কি জানেন আপনার দক্ষতা, পরিশ্রম, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সৃজনশীলতা দিয়ে অল্প পুঁজিতে একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন?

আমি বলব অবশ্যই পারবেন। অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া দেওয়ার জন্য আজকের এই লেখা। এখানে অল্প পুঁজিতে ব্যবসার কতগুলো আইডিয়া দেওয়া হলো, সব ব্যবসা আপনার জন্য ফিট একথা বলা যাবে না। আপনি ভাল করে চিন্তা করে দেখবেন কোন ব্যবসায় আপনার আগ্রহ ও দক্ষতা আছে, সে ব্যবসায় আপনি শুরু করতে পারেন।

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া    

১. কফিশপ

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া

একসময় মানুষ শুধু চা পানেই অভ্যস্ত ছিল। কিন্তু আয় বাড়ার সাথে সাথে মানুষের চাহিদারও পরিবর্তন এসেছে।  বর্তমানে অনেকেই কফির দিকে ঝুঁকছে। তাই কফি প্রেমীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। অল্প পুঁজিতে আপনি একটি কফি শপ দিতে পারেন।

প্রথম দিকে পুঁজি কম থাকলে ছোট একটা স্পেস ভাড়া করে সেখানে কিছু চেয়ার টেবিল পেতে কফির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কমার্শিয়াল জায়গা হলে ভাড়ার পরিমাণ একটু বেশি পড়বে। তবে প্রচুর গ্রাহক পাবেন। আর জমজমাট নয় এমন যায়গা হলে ভাড়া কম পড়বে তবে গ্রাহক তুলনামূলক কম পাবেন।

কফিশপ তাই শুধু কফি বিক্রি করবেন ব্যাপারটা এমন নয়। কফির সাথে ফাস্টফুড জাতীয় খাবারও বিক্রি করতে পারেন এর ফলে আপনার মুনাফার পরিমাণ বেশি হবে।

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ১০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

২. পোশাক বিক্রি

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে পোশাক বিক্রি অবশ্যই একটি ভাল আইডিয়া। আপনার যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে একটি দোকান নিতে পারেন। দোকানে একজন কর্মচারী রেখে ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন। কর্মচারী রাখা সম্ভব না হলে আপনার উপর গ্রাহকের একটু চাপ বেশি থাকবে।

আর যদি দোকান নেওয়ার মত অবস্থা না থাকে তাহলে অনলাইনে পোশাক বিক্রি শুরু করতে পারেন। আজকাল অসংখ্য মানুষ অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রি করছে। অনলাইনে পোশাক বিক্রি করার জন্য ফেসবুকে একটি পেইজ থাকলে যথেষ্ট। তবে আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থাকে তাহলে সেটি আপনার পোশাকের বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে।

আবার আপনি ইচ্ছা করলে বিভিন্ন দোকানে পাইকারি রেটে জামাকাপড় ডেলিভারির কাজ করতে পারেন। এজন্য আপনাকে বিভিন্ন দোকানের মালিকদের সাথে ভাল সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ৮০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

৩. অনলাইন সেবা ব্যবসা

অল্প টাকায় ব্যবসা শুরু করতে চাইলে অনলাইন সেবা ব্যবসা করতে পারেন। এটি একেবারে কম টাকায় শুরু করতে পারবেন। এজন্য আপনার একটা ছোট দোকান হলেই যথেষ্ট। একটি কম্পিউটার আর বসার জন্য দুটি চেয়ার হলেই যথেষ্ট।

এই ব্যবসা খুবই লাভজনক ব্যবসা। অনলাইনে একটি আবেদন করে দিলেই ৫০ টাকা। এজন্য আপনাকে বড়জোর ১০-১৫ মিনিট সময় ব্যয় করতে হবে। একটি কাগজ প্রিন্ট করে দিলেই ৫-১০ টাকা পাচ্ছেন। এর পাশাপাশি ছবিও প্রিন্ট করতে পারেন।

৪. ট্রাভেল এজেন্সির বিজনেস    

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া

আজকাল বেশিরভাগ মানুষ ছুটির দিনগুলো বাড়িতে কাটাতে চায় না। জীবনের একঘেয়েমি কাটাতে মনোরম বিভিন্ন যায়গায় ঘুরতে যায়। বর্তমানে প্রতিবছর প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ লাখ পর্যটক দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রে ভ্রমণ করে থাকেন। পর্যটকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসায় দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা। বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্টে পর্যটক বৃদ্ধির এই অবস্থার কথা উঠে এসেছে।

অল্প টাকায় আপনি খুব সহজে একটি ট্রাভেল এজেন্সি খুলতে পারেন। এখানে খরচের পরিমাণ খুব বেশি নয়। আপনাকে একটু বেশি পরিশ্রম করতে হবে আর প্রচুর ট্রাভেল করার মনমানসিকতা থাকতে হবে।

এই ব্যবসা করার জন্য হোটেল মালিক এবং পরিবহন কোম্পানিগুলোর সাথে ভাল যোগাযোগ থাকতে হবে যাতে সাশ্রয়ী মূল্যে এবং সহজেই আপনার গ্রাহকদের জন্য হোটেল রুম এবং বাস বা বিমানের টিকিট পাওয়া যায়।

৫. গুদাম ভাড়া ব্যবসা

এটি একটি লাভজনক ব্যবসা। কমার্শিয়াল এরিয়াতে যদি আপনার বাড়ি থাকে তাহলে আপনি চাইলেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। বাড়ির নীচতলা গুদাম হিসেবে ভাড়া দিতে পারেন। আপনার শুধু গুদাম রক্ষণাবেক্ষণে কিছু খরচ করতে হবে।

আর যাদের বাড়ি নেই তারাও অন্যের স্থাপনা ভাড়া নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। স্থানের গুরুত্বের উপর নির্ভর করবে গুদামের ভাড়া কেমন হবে। তবে নিয়মিত গ্রাহক পেলে এই ব্যবসায় ক্ষতির সম্ভাবনা খুব কম। গুদামগুলো সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ভাড়া দেওয়া হয় তাই গ্রাহক নিয়ে খুব বেশি চিন্তার কিছু নেই।

৬. ডেলিভারি ব্যবসা

অনলাইনে কেনাকাটার পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। অসংখ্য প্রতিষ্ঠান এখন অনলাইনে তাদের পণ্য বিক্রয় করছে। বিশেষ করে করোনা মহামারীতে ই-কমার্স ব্যবসা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। কিন্তু ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে পণ্য ডেলিভারি সমস্যা। এজন্য পণ্য ডেলিভারি ব্যবসার ডিমান্ড দিন দিন বাড়ছে।

আপনার পুঁজি যদি কম থাকে তাহলে আপনি ছোট পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। কয়েকজন কর্মী নিয়ে একটি নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার কাজ করতে পারেন। যুক্তিসঙ্গত পণ্য ডেলিভারি চার্জ রাখবেন তাহলে সহজেই গ্রাহক ধরে রাখতে পারবেন। তারপর ধীরে ধীরে কর্মীর সংখ্যা বাড়িয়ে আপনার ব্যবসার পরিধি বৃদ্ধি করতে পারবেন।

৭. মোবাইল রিচার্জ/ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা

অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায় বলে এই ধরণের ব্যবসায় অসংখ্য মানুষ যুক্ত হচ্ছে। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার খুব বেশি কিছুর দরকার নেই। একটা ছোট যায়গা আর একটি টেবিল হলেই যথেষ্ট।

মোবাইল রিচার্জ/ফ্লেক্সিলোডের পাশাপাশি মোবাইলের সিম বিক্রি করতে পারেন। আর অবশ্যই বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস রাখতে হবে। কারণ এগুলো ছাড়া এই ব্যবসা খুব একটা জমজমাট হবে না।

৮. মোবাইল/কম্পিউটার মেরামত ব্যবসা

মোবাইল/কম্পিউটার মেরামত ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে অবশ্যই মোবাইল বা কম্পিউটার মেরামত করার উপর ট্রেনিং নিতে হবে। কারণ এগুলো টেকনিক্যাল কাজ ট্রেনিং ছাড়া এসব কাজ করা সম্ভব না।

এসব ব্যবসায় ইনকাম যথেষ্ট ভাল। একটি মোবাইল মেরামত করলে কমপক্ষে ১০০ টাকা পাওয়া যায়। একটু জটিল সমস্যা হলে কয়েকশ টাকা আয় করা যায়।

কম্পিউটার মেরামতে আয় অনেক বেশি। সাধারণ একটি ইউন্ডোজ সেট আপ করে দিলেই স্থানভেদে ২০০-৫০০ টাকা পাওয়া যায়। এছাড়া হার্ডওয়ার বা অভ্যন্তরীণ কোন জটিল সমস্যার জন্য কয়েকশো থেকে হাজার টাকা আয় করা যায়।

৯. ই-কমার্স ব্যবসা

উদীয়মান উদ্যোক্তাদের কাছে ই-কমার্স খুবই আকর্ষণীয় একটি ব্যবসার নাম। অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ই-কমার্সকে রাখার কারণ হচ্ছে এই ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না।

খুব অল্প টাকায় এই ব্যবসা আপনি শুরু করতে পারেন। প্রথমদিকে শুধুমাত্র ফেসবুকে একটি পেইজ খুলেই ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেক উদ্যোক্তা ফেসবুকে লাইভে এসে তাদের পণ্য প্রমোট করছে। এছাড়া কিছু অর্থ খরচ করে ফেসবুকে বিজ্ঞাপন দিলে আপনার বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়ে যাবে।

তবে আপনি যদি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে ব্যবসা করেন তাহলে আপনার একটি ওয়েবসাইট বানাতে হবে। কারণ ওয়েবসাইটে আপনি আপনার পণ্যগুলোকে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে গ্রাহকদের সামনে প্রদর্শন করতে পারবেন।

বিস্তারিত পড়ুনঃ ই-কমার্স ব্যবসা কি? কিভাবে ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করবেন?

১০. ফুচকার দোকান

ফুচকা খেতে পছন্দ করে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। কম বেশি সবাই ফুচকা পছন্দ করে। ফুচকার ব্যবসাটি কিন্তু কফি শপের মত একটি স্মার্ট ব্যবসা। শিক্ষিত তরুণ যারা অন্য ব্যবসা করতে ইতস্তত বোধ করে তারা একটি ছোট দোকান নিয়ে ফুচকার ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

এই ব্যবসা করার জন্য আপনাকে স্থায়ী দোকান নিতে হবে এমন কোন কথা নেই। আপনি ভ্রাম্যমাণ দোকান নিয়েও এই ব্যবসা করতে পারবেন। ভ্রাম্যমাণ দোকানকে এমনভাবে সাজাবেন যা মানুষের নজর কাড়ে। আর আপনার ফুচকার স্বাদ যদি অন্যদের তুলনায় একটু ভিন্ন হয় তাহলে আপনার গ্রাহকের সংখ্যাও বেড়ে যাবে।

১১. আইসক্রিমের ব্যবসা  

আইসক্রিম বিজনেস

ছোট বড় সব বয়সী মানুষ আইসক্রিম খেতে পছন্দ করে। অল্প পুঁজিতে আপনি খুব সহজেই এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। দোকানে বিভিন্ন ধরণের আইসক্রিম সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবেন। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই প্রচুর গ্রাহক পেয়ে যাবেন।

আপনি চাইলে ভ্রাম্যমাণ আইসক্রিম কিয়স্কের মাধ্যমেও আইসক্রিমের ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন । বিভিন্ন স্কুল বা পার্কের সামনে আইসক্রিম ভাল পরিমাণে বিক্রি হয়।

১২. ফুড বিজনেস

বর্তমানে নারী উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় বেশি যুক্ত হচ্ছে। অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ফুড বিজনেসকে অবশ্যই সামনের সারিতে রাখতে হবে।

এই ব্যবসা করা আসলেই খুব সহজ। নিজের বাসার রান্না ঘরে রান্না করবেন আর অনলাইনে বিক্রি করবেন। যখন আপনার গ্রাহকের সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে তখন কয়েক জন রাঁধুনি নিয়োগ দিবেন যাতে সব গ্রাহকের চাহিদা পূরণ করা যায়। চেষ্টা করবেন বিভিন্ন অফিসের সাথে ব্যবসায়ীক সম্পর্ক স্থাপনের। কয়েকটি বড় অফিসকে যদি নিয়মিত গ্রাহক বানাতে পারেন তাহলে আপনার পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না।

১৩. হারবাল পণ্য বিক্রি

বিভিন্ন গাছ থেকে উৎপাদিত পণ্য হচ্ছে হারবাল পণ্য। হারবাল ঔষধ এবং রুপচর্চার উপাদানের যথেষ্ট চাহিদা আছে। এসব পণ্যে কোন ধরণের কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় না তাই অনেকের কাছে এসব পণ্য বেশ জনপ্রিয়। আপনি চাইলে অল্প টাকার মধ্যে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১৪. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা  

উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং সৃজনশীল মনোভাবের ব্যক্তিরা এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের ফলে নতুন নতুন চাহিদার তৈরি হচ্ছে। এসব চাহিদা মেটানোর জন্য কনসার্টসহ বিভিন্ন ধরণের ইভেন্টের আয়োজন করা হচ্ছে। আর এসব ইভেন্টের দায়িত্ব প্রদান করা হচ্ছে ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

আপনার যেহেতু পুঁজি অল্প তাই আপনি আপনার এলাকায় ছোট পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ছোট পরিসরে এই ব্যবসা আপনি খুব অল্প টাকায় শুরু করতে পারবেন। একটি ছোট অফিস নিবেন আর কিছু দক্ষ এবং পরিশ্রমী কর্মী সংগ্রহ করবেন। আপনি যদি আপনার কয়েকজন বন্ধু মিলে এই ব্যবসা শুরু করেন তাহলে  অতিরিক্ত কর্মীর খুব বেশি প্রয়োজন হবে না। এলাকার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষকে আপনাদের ব্যবসার কথা জানান এবং তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখুন। অভিজ্ঞতা, যোগাযোগের ব্যাপকতা এবং পুঁজির পরিমাণ বাড়লে বড় ইভেন্ট মেনেজের দায়িত্ব নেওয়ার চেষ্টা করুন।

১৫. ফুলের ব্যবসা

আপনি কি জানেন বাংলাদেশে ফুলের একটি বড় বাজার আছে। ফুল চাষিদের কেন্দ্রীয় প্লাটফর্ম বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির তথ্য মতে, বাংলাদেশে এক হাজার ছয়শ কোটি টাকার এক বিশাল ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। ভালবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাঙ্গালির বিভিন্ন উৎসবে ফুলের চাহিদা ব্যাপক বেড়ে যায়। এছাড়া সারা বছর ফুলের যথেষ্ট চাহিদা থাকে।

ফুলের ব্যবসা খুব অল্প টাকার মধ্যে শুরু করা যায়। একটি দোকান নিবেন আর কিছু ফুল কিনে দোকানে সাজিয়ে রাখবেন। ফুলের ব্যবসায় লাভের পরিমাণও অনেক বেশি।

১৬. প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস

প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস

অল্প পুঁজিতে শুরু করার জন্য একটি ভাল বিজনেস আইডিয়া। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন টি-শার্ট, মগ, ব্যাগ, ক্যাপসহ বিভিন্ন জিনিসে নানা ধরণের ছবি আঁকা থাকে। এসব ছবিসহ কাপড়, মগ বা ব্যাগের ডিমান্ড খুব বেশি।

আপনি যদি একজন ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য এই ব্যবসা শুরু করা খুবই সহজ। আর আপনি যদি ডিজাইনার নাও হয়ে থাকেন একজন ডিজাইনার নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। গ্রাহকরা আপনাকে তাদের জিনিসপত্রে কিছু প্রিন্ট করে দেওয়ার অর্ডার করবে আর আপনি সেসব ছবি প্রিন্ট করে দিবেন।

আপনার করা সুন্দর ডিজাইনগুলো অনলাইনে প্রচার করবেন, তখন দেখবেন অনেকেই আপনার কাছ থেকে বিভিন্ন কিছু প্রিন্ট করার জন্য যোগাযোগ করছে।

১৭. ব্লগ বিজনেস

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়ার মধ্যে ব্লগ বিজনেস অন্যতম। যদিও আমাদের দেশের মানুষের কাছে এই বিষয়টি একেবারে নতুন। ব্লগিং যে একটা বিজনেস একথা বললে অনেকেই আবাক হয়ে যায়। আবার যারা ব্লগিং করেন তারা মনে করেন একমাত্র গুগল অ্যাডসেন্সই ব্লগ থেকে আয়ের একমাত্র পথ!

দেখুন আপনি একটি ব্লগ মনিটাইজ করলেন তারপর সেই ব্লগে মাসে ১ লাখ ভিজিটর আসে। এই ১ লাখ ভিজিটর কিন্তু আপনার জন্য বিরাট সম্পদ। এদের একটা বড় অংশকে আপনি গ্রাহকে রুপান্তর করতে পারেবন। আপনার ব্লগে কন্টেন্টের পাশাপাশি প্রাসঙ্গিক পণ্যের বিজ্ঞাপন থাকবে আর সেসব পণ্য কিনবে ভিজিটররা। শুধু পণ্য না আপনি বিভিন্ন ধরণের সার্ভিস ব্যবসা করতে পারবেন। আপনি যদি কোন বিষয়ে দক্ষ হয়ে থাকেন তাহলে সেই বিষয়ে কোর্স তৈরি করে গ্রাহকদের কাছে কোর্স বিক্রি করতে পারবেন। ব্লগ তৈরি করা এবং ডোমেইন হোস্টিং বিষয়ে আপনার ধারণা কম থাকলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন। আমরা আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়ে সাহায্য করব।

১৮. চাইল্ড কেয়ার সেন্টার

child care center

একটা সময় ছিল যখন চাকরি বা ব্যবসাতে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল খুব কম। কিন্তু সেই যুগ আর নেই। মেয়েরা এখন স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য চাকরি এবং ব্যবসাতে অংশ নিচ্ছে। যার কারণে চাইল্ড কেয়ার সেন্টারের ডিমান্ড দিন দিন বেড়েই চলছে।

খুব কম টাকা দিয়ে আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি চাইলে আপনার বাড়ির একটা রুমেও চাইল্ড কেয়ার সেন্টার দিতে পারেন। এজন্য শিশুরা পছন্দ করে এমন কিছু খেলনা কিনে রাখতে হবে। আর শিশুদের দেখাশুনা করার জন্য মহিলা নিয়োগ দিতে হবে। প্রথম প্রথম আপনি আপনার বাসার মেম্বারদের নিয়েও এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। যেসব এলাকায় চাকরিজীবী মায়ের সংখ্যা বেশি সেসব এলাকায় এই ব্যবসা দারুণ জমবে।

১৯. কাজের লোক সাপ্লাই সার্ভিস

মানুষের ব্যস্ততা বেড়েছে তাই বাড়ির কাজের জন্য প্রায় সব পরিবারই কাজের লোকের সন্ধান করে থাকে। কিন্তু গার্মেন্টসসহ বিভিন্ন কল-কারখানায় প্রচুর নারী শ্রমিক নিয়োগ দেওয়ায় বাড়ির কাজের জন্য লোক পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে।

মানুষের এই সমস্যা সমাধানে আপনি এগিয়ে আসতে পারেন। কম টাকার মধ্যে একটি এজেন্সি গড়ে তুলতে পারেন যেখানে আপনার অধীনে নিবন্ধিত বাড়ির কাজের মানুষ থাকবে। আপনি বিভিন্ন বাড়িতে কাজের লোক সাপ্লাই দিবেন আর বিনিময়ে কমিশন নিবেন। যেসব কাজের মহিলা আপনার এজেন্সিতে নিবন্ধিত হবে তাদের কাছ একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ফি নিবেন।

২০. ওয়েবসাইট তৈরি করা

অল্প পুঁজিতে ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ওয়েবসাইট তৈরি করা একটি কার্যকর ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে। বর্তমানে প্রতিটি কোম্পানি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করছে। শুধু কোম্পানি নয় ব্যক্তি পর্যায়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে দেশে ওয়েবসাইট তৈরির হিড়িক পড়ে গেছে। অদূর ভবিষ্যতে নিজের জন্য ওয়েবসাইট বানানোর এই ঝোঁক আরও বাড়বে।

আপনি যদি একজন ওয়েব ডেভেলপার হয়ে থাকেন তাহলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ওয়েব ডেভেলপার হওয়া খুব কঠিন কোন বিষয় না। কোর্স করেও আপনি ওয়েব ডেভেলপার হতে পারবেন। অনলাইনে আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার এবং ইমেইল মার্কেটিং করবেন তাহলে গ্রাহক পেতে আপনার সমস্যা হবে না।

২১. প্রুফ রিডিং বিজনেস

একদিকে ওয়েবসাইট কন্টেন্টের পরিমাণ বাড়ছে অন্যদিকে লেখকরাও প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয়ের উপর বই লিখছে। যার কারণে প্রুফ রিডারদের চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে।

প্রুফ রিডারদের কাজ হচ্ছে লেখকদের লেখায় বানান বা বাক্য গঠনে কোন ভুল হলে সেটি বের করে সংশোধন করা। এজন্য যারা এই কাজ করবেন তাদের বানান এবং ব্যাকরণে যথেষ্ট দক্ষ হতে হবে। একাগ্র চিত্তে কোন লেখা পড়ার অভ্যাস থাকতে হবে।

কয়েকজন প্রুফরিডারকে সাথে নিয়ে অল্প টাকায় আপনি এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। এই ব্যবসার জন্য আপনার অফিস না থাকলেও কোন সমস্যা হবে না।

২২. হস্তশিল্পের ব্যবসা

হস্তশিল্পের চাহিদা এখনো অনেক বেশি। বিভিন্ন ধরণের মাটির তৈজসপত্র, শীতল পাটি, হাতপাখা, কারুকার্য করা চাদরের অনেক চাহিদা আছে। এই ব্যবসা শুরু করার জন্য খুব বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই।

এসব পণ্য বিক্রি করার জন্য একটি দোকান হলে ভাল হয় যদি দোকান দেওয়ার মত সামর্থ্য না থাকে তাহলে অনলাইনে এই ব্যবসা করতে পারেন। আবার আপনি ইচ্ছে করলে যেসব দোকান এসব পণ্য বিক্রি করে তাদেরকে পাইকারি রেটে এসব পণ্য সাপ্লাই দিতে পারেন।

২৩. বুটিক শপ  

বুটিক শপ  

নারী উদ্যোক্তারা এই ব্যবসায় বেশি পরিমাণে আসছে। যারা কাপড়ে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভাল ডিজাইন করতে পারে তাদের জন্য এই ব্যবসা। অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে একটি শো রুম নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনি যদি নিজে ডিজাইন করেন তাহলে ডিজাইনের খরচ বেঁচে যাবে। আর আপনি যদি ডিজাইনার নিয়োগ দেন তাহলে ডিজাইনারের পেছনে প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে।

২৪. কোচিং সেন্টার  

কোচিং সেন্টার নাম শুনলেই মানুষ মনে করে পড়াশুনা সম্পর্কিত কোন বিষয়। কিন্তু পড়াশুনা ছাড়াও আপনি অনেক বিষয়ে কোচিং করাতে পারেন।

পড়াশুনা বিষয়ে কোচিং হচ্ছে কমন। এখানে আপনি যদি একবার জনপ্রিয় হতে পারেন তাহলে প্রচুর ছাত্রছাত্রী পাবেন।

পড়াশুনা বাদে আপনি নাচ, গান, কবিতা আবৃতি, খেলাধুলা, শরীর চর্চার বিষয়ে কোচিং সেন্টার খুলতে পারেন।

২৫. কনসাল্টিং বিজনেস

আপনি যদি কোন বিষয়ে খুব ভাল জানেন তাহলে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। ধরেন আপনি শেয়ার বাজার সম্পর্কে খুব ভাল বুঝেন তাহলে শেয়ার বাজার পরামর্শক হিসেবে কাজ করতে পারবেন। এছাড়া আইন, স্থাপত্য, মনোবিজ্ঞান, বিনিয়োগ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ হলে এই ব্যবসা শুরু করা আপনার জন্য সহজ হবে।

আপনি যদি ভাল পরামর্শ দিতে পারেন এবং সেই পরামর্শ নিয়ে যদি আপনার ক্লায়েন্ট সফল হয় তাহলে আপনার সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে যাবে। এর পাশাপাশি আপনার সার্ভিস ফি’ও বাড়বে। যেহেতু পরামর্শ দেওয়া একটা টেকনিক্যাল বিষয় তাই ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার দক্ষতাই হবে মূল মাপকাঠি। এখানে খরচ বলতে একটা অফিস ভাড়া নেওয়া আর চেয়ার টেবিল কেনা এততুকুই।

উপসংহার

সম্পূর্ণ আর্টিকেল পড়ার পর আপনার এখন অনেক ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা হয়েছে যেগুলো অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়। আসলে ব্যবসা শুরু করার জন্য খরচের পরিমাণ এলাকা ভেদে ভিন্ন হয়ে থাকে। যেমন শহরে জমজমাট স্থানে আপনি মোটামুটি আয়তনের একটি অফিস নিলে আপনাকে কমপক্ষে ২০ হাজার টাকা ভাড়া দিতে হবে যা শহরতলিতে বা গ্রামে আপনি ১০ হাজারের মধ্যে পেয়ে যাবেন। তাই স্থান অনুযায়ী আপনার ব্যবসায়ের বিনিয়োগের পরিমাণ কম বা বেশি হবে। তবে যেখানে বিনিয়োগ বেশি সেখানে আয়ের পরিমাণও বেশি থাকে।

আসুন এক নজরে আরেকবার দেখে নেই অল্প পুঁজিতে ব্যবসার ২৫ টি আইডিয়া

১. কফিশপ
২. পোশাক বিক্রি
৩. অনলাইন সেবা ব্যবসা
৪. ট্রাভেল এজেন্সির বিজনেস
৫. গুদাম ভাড়া ব্যবসা
৬. ডেলিভারি ব্যবসা
৭. মোবাইল রিচার্জ/ফ্লেক্সিলোডের ব্যবসা
৮. মোবাইল/কম্পিউটার মেরামত ব্যবসা
৯. ই-কমার্স ব্যবসা
১০. ফুচকার দোকান
১১. আইসক্রিমের ব্যবসা
১২. ফুড বিজনেস
১৩. হারবাল পণ্য বিক্রি
১৪. ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসা
১৫. ফুলের ব্যবসা
১৬. প্রিন্ট অন ডিমান্ড বিজনেস
১৭. ব্লগ বিজনেস
১৮. চাইল্ড কেয়ার সেন্টার
১৯. কাজের লোক সাপ্লাই সার্ভিস
২০. ওয়েবসাইট তৈরি করা
২১. প্রুফ রিডিং বিজনেস
২২. হস্তশিল্পের ব্যবসা
২৩. বুটিক শপ
২৪. কোচিং সেন্টার
২৫. কনসাল্টিং বিজনেস

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here