উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া

উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া এমন ব্যক্তিরাই অন্বেষণ করে যারা ঝুঁকি নিয়ে পণ্য উৎপাদন করে বাজারে নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে চায়। উৎপাদন ব্যবসা করার জন্য যথেষ্ট সাহস এবং মনোবল প্রয়োজন। কারণ কোন পণ্য উৎপাদন করার জন্য অবকাঠামো তৈরি করতে হয় এবং বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে হয়। এজন্য একজন উৎপাদককে বড় ধরণের পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আপনি এত টাকা খরচ করে যদি দেখেন আপনার পণ্য আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না তখন আপনি বিপদে পড়ে যেতে পারেন।

তবে এটাও ঠিক আপনি যদি আপনার মেধা এবং সৃজনশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এমন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্য উৎপাদন করতে পারেন যা ব্যবহার করে একজন গ্রাহক আপনার প্রতিষ্ঠানের নিয়মিত গ্রাহকে পরিণত হয় তাহলে আপনি উৎপাদন ব্যবসায় সফল হবেন। তাই উৎপাদন ব্যবসায় নামার আগে আপনি যে পণ্য উৎপাদন করতে যাচ্ছেন সেই পণ্যকে বাজারের শ্রেষ্ঠ পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ভালভাবে গবেষণা করে নিন।

তাহলে আর কথা না বাড়িয়ে উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া নিয়ে মূল লেখায় প্রবেশ করি।

২০ টি উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া

১. বেকারি পণ্য উৎপাদন 

উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া

আমাদের দেশের সবাই কম বেশি প্রতিদিন বিস্কিট, পাউরুটি, কেক ইত্যাদি বেকারি পণ্য ক্রয় করে থাকি। উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে বেকারি পণ্য উৎপাদন একটি জনপ্রিয় ব্যবসায়ের আইডিয়া।

বেকারি ব্যবসা করার জন্য আপনার একটি কারখানা লাগবে। সেখানে বেকারি পণ্য উৎপাদনের জন্য মেশিন লাগবে এবং পণ্য উৎপাদনে সাহায্য করার জন্য শ্রমিক লাগবে।

আপনি প্রথমদিকে আপনার এলাকাকে টার্গেট করে ছোট পরিসরে এই ব্যবসা শুরু করুন। যদি দেখেন আপনার বেকারির পণ্য এলাকার মানুষ খুব পছন্দ করছে তখন আরও কিছু এলাকা টার্গেট করে ব্যবসার আওতা বাড়ান।

আরো পড়ুনঃ ২০২২ সালের জন্য ১০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

২. দুধ উৎপাদন ব্যবসা 

দুধের চাহিদা সারা বছর জুড়ে থাকে। তবে রোজার সময় দুধের চাহিদা ব্যাপক হারে বেড়ে যায়। চাহিদা বেশি থাকার কারণে দামও কিছুটা বেড়ে যায়।

দুধ উৎপাদন ব্যবসা একটি লাভজনক উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া। দুধ উৎপাদন করে তা সাপ্লাই দিয়ে আপনি প্রতি লিটারে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত লাভ করতে পারবেন।

দুধ উৎপাদন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কয়েকটি গাভী লাগবে। এমন গাভী কিনবেন যেগুলো প্রচুর দুধ উৎপাদন করতে পারে। গাভীদের থাকার জন্য একটি গোয়ালঘর প্রয়োজন। গোয়ালঘর এমনভাবে তৈরি করবেন যাতে আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে। মনে রাখবেন আলো প্রবেশ করতে পারে না এমন স্যাঁতস্যাঁতে যায়গায় গাভী পালন করলে গাভীগুলোর বিভিন্ন ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ ২০২২ সালের জন্য ৮০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

৩. মাংস উৎপাদন ব্যবসা  

মাংস উৎপাদন ব্যবসা খুবই লাভজনক ব্যবসা। মাংস উৎপাদন ব্যবসা করার জন্য আপনাকে গরু, ছাগল, ভেড়া, মুরগি ইত্যাদির খামার করতে হবে।

মাংস উৎপাদন বাড়ানোর জন্য গবাদিপশুর যত্ন খুব ভালভাবে এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিতে হবে। এই ধরণের খামার করার আগে আপনাকে অবশ্যই এসব গবাদিপশু লালন পালন করার পদ্ধতি সম্পর্কে খুব ভালভাবে জানতে হবে। গবাদিপশুর রোগবালাই সম্পর্কে ধারনা থাকতে হবে।

আপনি যদি গবাদিপশুগুলোকে হৃষ্টপুষ্ট করতে পারেন তাহলে প্রচুর মাংস পাবেন। এসব মাংস আপনি প্যাকেটজাত করে বিক্রি করতে পারেন। যেহেতু বাংলাদেশ একটি মুসলিম প্রধান দেশ। তাই আপনি যদি হালাল উপায়ে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজারে ছাড়তে পারেন তাহলে এই ব্যবসায় আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে।

আরো পড়ুনঃ অল্প পুঁজিতে ২৫ টি আকর্ষণীয় ব্যবসার আইডিয়া 

 ৪. কাগজ তৈরি

কাগজ এমন একটি বস্তু যা প্রতিষ্ঠানের হিসাব রাখা, লেখা প্রিন্ট করা, ছাত্রছাত্রীদের পড়ালেখায় অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। এই ধরণের উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া হচ্ছে কম ঝুঁকির উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া। কারণ এই ধরণের পণ্য একদিকে পচনশীল নয় অন্যদিকে প্রচুর চাহিদা।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের কাগজ তৈরি হয় তার মধ্যে এ-টু, এ-থ্রি, এ-ফোর, এ-ফাইভ এই চার ধরণের কাগজের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। কাগজ তৈরির কারখানা দেওয়ার জন্য আপনাকে কাগজ তৈরি মেশিন কিনতে হবে, কাঁচামাল সংগহ করতে হবে এবং কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।

কাগজ তৈরি করার পর তা বিভিন্ন দোকান বা পাইকারদের কাছে সরবরাহ করতে হবে। এজন্য পাইকার এবং ষ্টেশনারী দোকান মালিকদের সাথে ভাল সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।

৫. কাগজের ব্যাগ ও হাল্কা পিচবোর্ডের বাক্স তৈরি

কাগজের ব্যাগ

পলিথিন ব্যাগ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তাই পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ। এজন্য কাগজের ব্যাগের চাহিদা দেশের সর্বত্র। মুদির দোকান থেকে শুরু করে কাপড়ের দোকান, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে কাগজের ব্যাগের ব্যবহার করা হয়।

কাগজের ব্যাগ তৈরি করার জন্য ভালো মানের কাঁচামাল লাগবে যেমন পেপার শিট, পেপার রোল, প্রিন্টিং কেমিক্যাল, আইলেট ইত্যাদি।

কাগজ তৈরি করার জন্য স্কেল মেশিন, ক্রিজিং মেশিন, কাটিং মেশিনসহ বিভিন্ন ধরণের মেশিন লাগবে।

হাল্কা পিচবোর্ডের বাক্স তৈরি করতে পারেন। এগুলো মিষ্টির দোকান, জুতার দোকান, শাড়ির দোকানে খুব বেশি ব্যবহৃত হয়।

৬. রান্নার কাজে ব্যবহার্য জিনিসপত্র উৎপাদন ব্যবসা   

রান্নার কাজে আমাদের বিভিন্ন ধরণের জিনিস লাগে। যেমন – খুন্তি, পাতিল, ছুরি, চপিং বোর্ড, সবজি পিলার, প্যান, প্রেসার কুকার, হামান দিস্তা, চামচ ইত্যাদি। এসব জিনিস ছাড়া রান্না করাও সম্ভব নয়। তাই বলা যায় এগুলোর চাহিদাও তুঙ্গে।

আপনি সবকিছু উৎপাদন করতে পারবেন এটা সম্ভব নাও হতে পারে। কারণ আপনার পুঁজি যদি কম থাকে তাহলে আপনার পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব নয়। আপনার দক্ষতা এবং সক্ষমতা অনুযায়ী একটা বা দুইটা রান্নার তৈজসপত্র তৈরি করতে পারেন। তারপর সেগুলো আপনার নিজস্ব দোকানে এবং বিভিন্ন মেলায় বিক্রি করতে পারেন। মেলায় কথা বললাম কারণ আমি দেখেছি মেলার মধ্যে এসব জিনিসপত্র প্রচুর বিক্রি হয়। তাই যখন কোন মেলা হতে দেখবেন তখন সেখানে অংশ নিতে চেষ্টা করুন।

৭. পোশাক তৈরি  

আপনার বিনিয়োগের সক্ষমতা অনুযায়ী আপনি পোশাক তৈরির ব্যবসা দিতে পারেন। আপনার যদি অনেক পুঁজি থাকে তাহলে রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আপনার পুঁজি এবং সক্ষমতার কমতি থাকলে দেশের বাজারকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করতে পারেন। আপনার পুঁজি যদি খুব কম হয় তাহলে নিজের এলাকাকে টার্গেট করে পোশাক তৈরি করে বিক্রি করতে পারেন।

পোশাক তৈরির ক্ষেত্রে আপনি বিশেষ ক্যাটাগরি নির্বাচন করতে পারেন। যেমন আপনি মেয়েদের পোশাক বানাতে পারেন, ছেলেদের পোশাক বানাতে পারেন। এখানে আপনি সাব-ক্যাটাগরি করতে পারেন যেমন বড়দের পোশাক, ছোটদের পোশাক। আবার ছেলে-মেয়েদের পোশাকেও সাব-ক্যাটাগরি করে নির্দিষ্ট পোশাক তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে পারেন। যেমন অনেকে শুধু লুঙ্গি উৎপাদন করে বিক্রি করে, কেউ শার্ট, কেউ প্যান্ট, কেউ মেয়েদের সালোয়ার ইত্যাদি।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করবেন?(একটি কমপ্লিট গাইড) 

৮. চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন  

আমরা সবাই জানি বাজারে চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা আছে এবং এই ধরণের পণ্যের দামও অনেক বেশি। তবে এসব পণ্যের দাম বেশি থাকলেও প্রধান কাঁচামাল গবাদিপশুর চামড়ার মূল্য একেবারে কম।

চামড়া বিভিন্ন ধরণের পণ্য তৈরি করা যায়, যেমন জুতা, বেল্ট, ব্যাগ, জ্যাকেট ইত্যাদি। তাই আপনার যদি বড় ধরণের পুঁজি বিনিয়োগ করার সামর্থ্য থাকে তাহলে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

৯. ষ্টেশনারী পণ্য উৎপাদন ব্যবসা  

বিভিন্ন ধরণের ষ্টেশনারী পণ্য আছে যেমন স্টেপলার, পিন, জ্যামিতি বক্স, খাতা, কলম, পেন্সিল, পেন্সিল বক্স, পেন্সিল ব্যাগ, পেন্সিল কাটার, ইরেজার, হাইলাইটার পেন, ক্যালকুলেটর, পানির বোতল, ক্লিপ বোর্ড, গ্লু, কাগজ ইত্যাদি।

এই ধরণের পণ্য সরকারি-বেসকারি অফিস আদালত, স্কুল-কলেজে প্রচুর ব্যবহৃত হয়। এই ধরণের ব্যবসাও যথেষ্ট লাভজনক। তাই আপনার যদি ইচ্ছে থাকে তাহলে ষ্টেশনারী পণ্য উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১০. ঘি, মাখন এবং পনির তৈরি  

ঘি, মাখন এবং পনির উৎপাদন ব্যবসা

ঘি, মাখন বা পনির তৈরি হতে পারে অল্প পুঁজিতে একটি লাভজনক উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া। যারা বাড়িতে গাভী পালন করেন এবং প্রচুর দুধ পান তারা এসব ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

এই ধরণের পণ্য তৈরি করার জন্য কিছু প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে যারা এসব পণ্য উৎপাদনে অভিজ্ঞ তাদের কাছ থেকে এসব পণ্য উৎপাদনের পদ্ধতি জেনে নিন।

আপনি চাইলে বাড়িতে এসব পণ্য উৎপাদন করতে পারবেন। কোন কারখানার প্রয়োজন নেই। উৎপাদন করার পর নিজের দোকানে বিক্রি করতে পারেন আবার বিভিন্ন দোকানে সাপ্লাই দিতে পারেন।

১১. শিশুদের খেলনা উৎপাদন  

শিশুদের খেলনার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হচ্ছে পুতুল। আপনি যদি সুন্দর ডিজাইনের পুতুল তৈরি করতে পারেন তাহলে খুব ভাল ব্যবসা করতে পারেন। আমি অনেকের কথা জানি যারা শুধু পুতুল বিক্রি করে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করে।

শিশুদের খেলনার মধ্যে আরো আছে রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি, প্লেন, ট্রেন, পিস্তল, এক্স বক্স, সুপারম্যান, সাইকেল ইত্যাদি। আপনার যদি পুঁজি অনেক বেশি থাকে তাহলে একসাথে কয়েকটা পণ্য উৎপাদন করতে পারেন, যদি পুঁজি কম থাকে একটা বা দুইটা পণ্য তৈরি করে ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১২. টিস্যু উৎপাদন ব্যবসা 

টিস্যু একটি নিত্য ব্যবহার্য পণ্য। খাওয়ার পর হাত মোছা, ঘাম মোছা বা টয়লেটের পর আমাদেরকে টিস্যু ব্যবহার করতে হয়। বিভিন্ন ধরণের টিস্যু আছে যেমন টয়লেট টিস্যু, টাওয়েল টিস্যু, সফট টিস্যু, ডায়াপার, স্যানিটারি প্যাড ইত্যাদি।

বিভিন্ন অনুষ্ঠান এবং রেস্টুরেন্টে প্রচুর টিস্যুর ব্যবহার হয়। এজন্য দেশে টিস্যু পেপারের কয়েক হাজার কোটি টাকার এক বিশাল বাজার রয়েছে। এই বিশাল বাজারের একটা অংশ ধরতে চাইলে আপনিও শুরু করতে পারেন টিস্যু পেপারের ব্যবসা। জার্মানির রিকার্ড এবং বইয়াত মেশিনগুলো টিস্যু তৈরি জন্য সর্বাধুনিক মেশিন। তাই টিস্যু তৈরি করার জন্য এই ধরণের মেশিন আপনি ব্যবহার করতে পারেন।

১৩. কার্পেট, পাপোশ এবং টেবিল ক্লথ তৈরি

বাসাবাড়ি, অফিস, রেস্টুরেন্ট, হোটেল সব যায়গায় কার্পেট,  পাপোশ এবং টেবিল ক্লথের ব্যবহার আছে। তাই এই ধরনের পণ্যের চাহিদাও অনেক। এসব পণ্য তৈরি করার জন্য দক্ষ কর্মীর প্রয়োজন হবে। এছাড়া ডিজাইনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এসব পণ্য যত আকর্ষণীয় ডিজাইনের হবে তত বেশি বিক্রি হবে।

এসব পণ্য উৎপাদন ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার খুব বেশি পুঁজির প্রয়োজন নেই। ১-২ লাখ টাকা দিয়েই আপনি ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১৪. গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন 

আমাদের দেশে বেশিরভাগ গাড়িই রিকন্ডিশন যার কারণে এসব গাড়ি সচল রাখার জন্য কিছুদিন পর পর মেরামত করতে হয়। তবে মেরামত শুধু রিকন্ডিশন গাড়িতেই লাগে তা নয় নতুন গাড়িরও যেকোন সময় সার্ভিসিং এর প্রয়োজন হতে পারে।

গাড়ি মেরামত করার জন্য বিভিন্ন ধরণের যন্ত্রাংশের প্রয়োজন। যেমন নাটবল্টু, রাবার, ব্রেকসু, গ্লাস হ্যান্ডেল, লুকিং গ্লাস, হর্ন, ড্যাশক্যাম, আয়না, বিয়ারিং, পাখা, স্প্রিং, বুস্টার, হ্যাঙ্গার, হুইল, টায়ার ইত্যাদি। আমাদের দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসব পণ্য উৎপাদন করছে। তবে এখনো বেশিরভাগ পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

রাজধানীর ধোলাইখাল সম্পর্কে আশা করি আপনি জানেন। এখানে ছোট বড় কয়েক হাজার প্রতিষ্ঠান গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরি করছে। আপনি যদি এই ধরণের যন্ত্রাংশ উৎপাদন ব্যবসায় যুক্ত হতে চান তাহলে আপনার উচিৎ হবে ধোলাইখাল এসে এই ব্যবসা সম্পর্কে সরাসরি অভিজ্ঞতা নেওয়া।

১৫. খেলাধুলার সামগ্রী উৎপাদন

আমাদের দেশে খেলাধুলার সামগ্রীর রয়েছে একটি বড় বাজার। কারণ ১৬ কোটি মানুষের এদেশে অসংখ্য মানুষ নিয়মিত খেলাধুলা করে। এর মধ্যে অনেকেই আছেন যারা প্রফেশনাল প্লেয়ার।

ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, ভবিলব, ব্যাডমিন্টনসহ বিভিন্ন ধরণের খেলাধুলা আমাদের দেশের মানুষ নিয়মিত খেলে থাকে। তাই আপনি এসব খেলা সংশ্লিষ্ট সামগ্রী তৈরি করতে পারেন। এছাড়া জার্সি, ট্রাউজার এবং কাপ তৈরি করতে পারেন।

১৬. এনার্জি বাল্ব উৎপাদন 

এনার্জি বাল্ব উৎপাদন

আমরা সবাই বিদ্যুৎ খরচ বাঁচানোর জন্য এনার্জি বাল্ব ব্যবহার করে থাকি। শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র এখন এনার্জি বাল্বের ব্যবহার করা হচ্ছে।

এনার্জি সেভিংস লাইট তৈরির ব্যবসা শুরু করা খুব কঠিন বিষয় নয়। আপনি চাইলে চীন থেকে যন্ত্রাংশ কিনে দেশে এনে এনার্জি লাইট তৈরি করতে পারবেন। এভাবে লাইট তৈরিতে খরচ পড়বে অনেক কম। তবে আপনার পুঁজির পরিমাণ যদি অনেক বেশি থাকে তাহলে নিজস্ব প্ল্যান্ট বসিয়ে ভাল মানের এনার্জি সেভিংস এলইডি বাল্ব তৈরি করে বাজারে বিক্রি করতে পারেন।

১৭. বিছানার চাদর এবং বালিশের কাভার তৈরি 

বিভিন্ন কোম্পানি বা ব্যক্তি পর্যায়ের উদ্যোক্তা বিছানার চাদর এবং বালিশের কাভার তৈরি করছে। যাদের ডিজাইন যত বেশি সুন্দর এবং সৃজনশীল তাদের চাদর এবং বালিশের কাভার বেশি বিক্রি হয়।

আপনি যদি ভাল ডিজাইনার হয়ে থাকেন তাহলে এই ধরণের পণ্য উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে পারেন।অনেক গৃহিণী আছেন যারা কিছু কাজ করে পরিবারের আর্থিক সমস্যা দূর করতে চান তাদেরকে কাজে লাগাতে পারেন। এরকম কিছু মহিলাকে আপনি প্রশিক্ষণ দিয়ে চাদর এবং বালিশের কাভার তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

১৮. আচার তৈরির ব্যবসা  

যারা অল্প পুঁজিতে ঘরোয়াভাবে উৎপাদন ব্যবসা শুরু করতে চান তাদের জন্য আচার তৈরি করা হতে পারে একটি সল্প পুঁজির লাভজনক উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের আচার তৈরি করা হয়। যেমন আমের আচার, জলপাই আচার, চালতা আচার, বড়ই আচার, রসুনের আচার, বোম্বাই আচার, আলুবুখারার আচার, তেঁতুল চাটনি আচার, খেজুরের আচার, গার্লিক চাটনি, সাতকড়ার আচার ইত্যাদি। আপনি যদি ভাল আচার বানাতে জানেন তাহলে আপনি আচার তৈরির ব্যবসা শুরু করতে পারেন। অনেকেই আচার বিক্রি করে জীবনে স্বাবলম্বী হয়েছে।

১৯. চানাচুর তৈরি 

ছোট বড় সবাই কম বেশি চানাচুর খেতে পছন্দ করে। মোটামুটি অল্প পুঁজি দিয়ে আপনি চানাচুর উৎপাদনের ব্যবসায় নামতে পারেন।

এই ধরণের ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমে এলাকাভিত্তিক স্থানীয় মার্কেটকে অগ্রাধিকার দিবেন। যখন দেখবেন আপনার চানাচুর স্থানীয় মার্কেটে ভাল চলছে তখন পার্শ্ববর্তী অন্যান্য এলাকাকে টার্গেট করে ব্যবসার পরিধি বাড়াবেন।

২০. সিরামিক পণ্য উৎপাদন ব্যবসা 

সিরামিকের তিনটি উপখাত রয়েছে— তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার। কোন কারখানা তৈজসপত্র মানে থালা বাটি ইত্যাদি তৈরি করে, কোন কারখানা টাইলস বা স্যানিটারিওয়্যার তৈরি করছে।

আমাদের দেশে সিরামিকের রয়েছে বিশাল বাজার, বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী, এই বাজারের আকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে দেশের উৎপাদকেরা ৮৫ ভাগ দখল করে আছে, বাকিটা বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

আপনিও চাইলে এই বিশাল বাজারে ভাগ বসাতে পারেন। উৎপাদন করতে পারেন সিরামিকের তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার ইত্যাদি।এর মধ্যে টাইলসের দিকে মনোযোগ দিবেন বেশি কারণ এই বাজারের একটা বড় অংশ টাইলসের দখলে।

পরিশেষে 

উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া আরও অনেক আছে। তবে আমি যেসব আইডিয়া নিয়ে লিখলাম সেগুলো বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া। পরিশেষে আবারো বলতে চাই উৎপাদন ব্যবসা হচ্ছে চ্যালেঞ্জিং ব্যবসা। এই ব্যবসায় নামার আগে অবশ্যই বর্তমান বাজার সম্পর্কে আপনাকে ভালভাবে বিশ্লেষণ করতে হবে। বাজারে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টের পণ্য আনার জন্য রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্টে দক্ষ এবং উচ্চ শিক্ষিত কর্মী নিয়োগ দিতে হবে।

চলুন ২০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া এক নজরে দেখে নিই –

১. বেকারি পণ্য উৎপাদন
২. দুধ উৎপাদন ব্যবসা
৩. মাংস উৎপাদন ব্যবসা
৪. কাগজ তৈরি
৫. কাগজের ব্যাগ ও হাল্কা পিচবোর্ডের বাক্স তৈরি
৬. রান্নার কাজে ব্যবহার্য জিনিসপত্র উৎপাদন ব্যবসা
৭. পোশাক তৈরি
৮. চামড়াজাত পণ্য উৎপাদন
৯. ষ্টেশনারী পণ্য উৎপাদন ব্যবসা
১০. ঘি, মাখন এবং পনির তৈরি
১১. শিশুদের খেলনা উৎপাদন
১২. টিস্যু উৎপাদন ব্যবসা
১৩. কার্পেট, পাপোশ এবং টেবিল ক্লথ তৈরি
১৪. গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন
১৫. খেলাধুলার সামগ্রী উৎপাদন
১৬. এনার্জি বাল্ব উৎপাদন
১৭. বিছানার চাদর এবং বালিশের কাভার তৈরি
১৮. আচার তৈরির ব্যবসা
১৯. চানাচুর তৈরি
২০. সিরামিক পণ্য উৎপাদন ব্যবসা

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here