গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় কোন ফেলনা জিনিস নয়। এই ঝুট কাপড় নিয়ে ব্যবসা করে দেশের অসংখ্য মানুষ তাদের বেকারত্ব দূর করেছে। এই ঝুট ব্যবসার সাথে প্রত্যক্ষভাবে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জড়িত। এদের মধ্যে কেউ ঝুট ব্যবসায়ী, কেউ ঝুট শ্রমিক, কেউ আবার ঝুট সাপ্লাইয়ের কাজ করে।

দেশের ভেতর ঝুট কাপড়ের যেমন বড় বাজার রয়েছে তেমনি রয়েছে বিদেশেও। ইউরোপ আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে গার্মেন্টস বর্জ্য হিসেবে পরিচিত ঝুট কাপড় বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। অনেক সময় সরাসরি গার্মেন্টস ঝুট কাপড় রপ্তানি হচ্ছে আবার মাঝে মাঝে রিসাইকেল পণ্য হিসেবে ঝুট দিয়ে তৈরি বিভিন্ন জিনিস রপ্তানি হচ্ছে। তাই বলা যায় ঝুট ব্যবসায়ের দেশ এবং দেশের বাইরে রয়েছে বিরাট সম্ভাবনাময় বাজার তাই আপনিও গার্মেন্টস ঝুট ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় দিয়ে যেসব পণ্য তৈরি হয় 

  • তুলা

  • সুতা

  • বিভিন্ন ধরণের পোশাক

  • ফাইবার

  • লেপ/তোশক

  • ম্যাট্রেস

আরো পড়ুনঃ গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা কি? কিভাবে এই ব্যবসা শুরু করবেন?

ঝুট কাপড় কোথায় পাওয়া যায়

দেশের বিভিন্ন যায়গায় আপনি ঝুট কাপড় পাবেন। মূলত এসব এলাকা হচ্ছে গার্মেন্টস কারখানা অধ্যুষিত এলাকা। এসব এলাকার মধ্যে রয়েছে –

  • ঢাকা

  • সাভার

  • গাজীপুর

  • নারায়নগঞ্জ

  • চট্টগ্রাম

  • নরসিংদী

এছাড়া মিরপুরে রয়েছে বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম বৃহৎ ঝুট পল্লী। আপনি চাইলে মিরপুর ঝুট পল্লী থেকে ঝুট কাপড় কিনে দেশের যে কোন যায়গায় নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করবেন?(একটি কমপ্লিট গাইড)

ঝুট কাপড়ের দাম 

বিভিন্ন ধরণের ঝুট কাপড় রয়েছে। এগুলোর দামের পার্থক্যও অনেক। যেমন –

  • সাধারণ মানের ঝুট কাপড় আপনি ১০-১৫ টাকা কেজি দরে পেয়ে যাবেন।

  • গ্যাবার্ডিন প্যান্টের ঝুট কাপড়ের কেজি ৭০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা

  • ব্লেজারের ঝুট ৬০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা

  • জিপার ৭০ টাকা থেকে ১১০ টাকা

  • জ্যাকেটের ঝুট ৯০ টাকা থেকে ১৪০ টাকা

তবে এখানে যে দাম দেওয়া হয়েছে তার চেয়ে অনেক কমেও আপনি কিনতে পারবেন যদি কারখানার সাথে আপনি সেভাবে চুক্তি করতে পারেন বা কারখানার সাথে সম্পৃক্ত আছে এমন কারও মাধ্যমে ম্যানেজমেন্টের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন?

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে যে কোন একটি গার্মেন্টসে যোগাযোগ করতে হবে। আপনার যদি সুযোগ থাকে তাহলে একাধিক গার্মেন্টসের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

গার্মেন্টসের সাথে যোগাযোগ করে তাদের কাছ থেকে ঝুট কাপড় কেনার চুক্তি করতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী আপনি ঝুট কাপড় পেয়ে যাবেন। সাধারণত পোশাক কারখানাগুলো প্রতি সপ্তাহে একবার তাদের কারখানা থেকে ঝুট কাপড়ের বর্জ্য সরিয়ে থাকে। তাই আপনি প্রতি সপ্তাহে কারখানা গেইট থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করতে পারবেন।

কারখানা কর্তৃপক্ষ ঝুট কাপড়গুলো ট্রাকে করে কারখানা থেকে বের করে থাকে তাই ট্রাকে যে পরিমাণ কাপড় থাকে সেই পরিমাণ ঝুট কাপড় আপনি কিনতে পারবেন।

তারপর আপনি সেই কাপড় দিয়ে বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা করতে পারেন। আপনি সরাসরি অন্য কোন পার্টির কাছে বিক্রি করে নগদে মুনাফা করতে পারেন।

দেশের বাজারে যেসব সস্তা কাপড় মার্কেটে পাওয়া যায় তার একতা বড় অংশই তৈরি হয় এসব ঝুট কাপড় থেকে। আপনি চাইলে কয়েকজন দর্জি নিয়ে একটি ছোট পোশাক তৈরির কারখানা দিতে পারেন। যেহেতু এসব পোশাক দামে সস্তা তাই ভাল ব্যবসা করতে পারবেন।

আপনি এসব গার্মেন্টস ঝুট কাপড় দিয়ে সুতা তৈরি করতে পারবেন। এসব সুতা বিভিন্ন দর্জির দোকানে এবং ছোট পোশাক কারখানায় সাপ্লাই দিতে পারবেন।

ঝুট কাপড় দিয়ে যেহেতু তুলা তৈরি করা যায় তাই আপনি তুলার ব্যবসা শুরু করতে পারেন। তুলা ব্যবসা বেশ লাভজনক। ঝুট কাপড় থেকে ১ কেজি তুলা তৈরি করতে করতে আপনার সর্বোচ্চ ২০ টাকা খরচ হবে। এই তুলা আপনি ২৫-৩৫ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পারবেন। ঝুট থেকে তুলা তৈরি করার জন্য আপনাকে একটি মেশিন ক্রয় করতে হবে। মেশিনটির দাম ১ লাখ ৩০ হাজার টাকার মতো হবে। তবে সাপ্লায়ার ভেদে কিছু কম বা বেশি হতে পারে। এই মেশিনের সাহায্যে আপনি দৈনিক কমপক্ষে ১ টন তুলা তৈরি করতে পারবেন। তাহলে আপনি যদি প্রতি কেজিতে ৫ টাকা লাভ করলেও দৈনিক ৫ হাজার টাকা লাভ। আরও বেশি দরে বিক্রি করতে পারলে আরও বেশি লাভ করতে পারবেন।

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় দিয়ে আপনি ফাইবার তৈরি করতে পারেন। ইউরোপে ঝুট কাপড় দিয়ে তৈরি ফাইবারের অনেক চাহিদা। তাই ইউরোপে ফাইবার রপ্তানি করেও ভাল পরিমাণে আয় করতে পারবেন।

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা শুরু করতে কেমন পুঁজি লাগে

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনার কেমন পুঁজি লাগবে তা আপনার ব্যবসার উপর নির্ভর করবে। আপনি যদি কারখানা থেকে ঝুট কাপড় সংগ্রহ করে সরাসরি অন্য পার্টির নিকট বিক্রি করতে চান তাহলে আপনার ১ থেকে ২ লাখ টাকা পুঁজি হলেই যথেষ্ট। শুধু ঝুটের দাম এবং পরিবহণ ভাড়া হলেই যথেষ্ট।

আপনি যদি ঝুট কাপড় থেকে তুলা তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

ঝুট কাপড় দিয়ে নতুন পোশাক তৈরির কারখানা দিতে চাইলে কমপক্ষে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা লাগবে।

এছাড়া আপনি যদি অন্য কোন ধরণের ব্যবসা করতে চান তাহলে সেই ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে।

পরিশেষে 

গার্মেন্টস ঝুট কাপড় ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা এজন্য অনেক উদ্যোক্তা এই ব্যবসাটি করার ব্যাপারে আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যবসা কিভাবে শুরু করবে সেটা না জানার কারণে অনেকেই সম্ভাবনাময় ঝুট ব্যবসায় আসতে পারছেন না। আশা করি এই লেখা পড়ার পর এই ব্যবসার বাপারে আপনার মনে আর কোন সংশয় থাকবে না।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

4 COMMENTS

  1. আমি তুলা কিনতে আগ্রহী প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ Ton তুলা লাগবে, আমি কিভাবে পেতে পারি জানাবেন, আমার নাম্বার ০১৭১১৮৫৮১৪৮

  2. আমি তুলা বানানো মেশিন খুজতেছি কোথায় পাব?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here