গার্মেন্টস ব্যবসা

আমাদের দেশে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার প্রতি অনেকের আগ্রহ আছে। এই আগ্রহের পেছনে অনেক কারণ আছে। একটি বড় কারণ হচ্ছে পোশাক হচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। মোট রপ্তানির ৮৩ ভাগ আসে পোশাক রপ্তানি থেকে। বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের রয়েছে শক্ত অবস্থান। কখনো দ্বিতীয় আবার কখনো তৃতীয় হয়। বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের হিস্যাও অনেক। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিসটিকস রিভিউ ২০২১ প্রতিবেদন মতে বিশ্ব বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির হিস্যা হচ্ছে ৬.৩ শতাংশ। এর চেয়ে বেশি হিস্যা আছে কেবল চীন এবং ভিয়েতনামের।

শুধু যে বিদেশে পোশাক রপ্তানির জন্য গার্মেন্টস ব্যবসা করবেন তা নয়, আমাদের দেশেও রয়েছে পোশাকের বিশাল বাজার। দেশের বাজারকে টার্গেট করেও গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে পারেন।

গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার ধাপ 

গার্মেন্টস ব্যবসা

একটি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার আগে আপনাকে ঠিক করতে হবে আপনি কোন ধরণের গার্মেন্টস ব্যবসা করতে চান। আমাদের দেশে কেউ ওভেন পোশাক তৈরির গার্মেন্টস, কেউ নীট গার্মেন্টস আবার কেউ বিশেষায়িত গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করে। গার্মেন্টসের ধরণের উপর ডকুমেন্টসের কিছু পার্থক্য হয়ে থাকে। তবে সব ধরণের পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠার ধাপগুলো একই।

গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার ধাপসমূহঃ

১.  নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া

২. আইনি প্রক্রিয়া

৩. কারখানা স্থাপন এবং ব্যবসা শুরু

১. নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া

গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য প্রথমেই আপনাকে গার্মেন্টস কোম্পানির জন্য নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে। নিবন্ধনের প্রথম ধাপ হচ্চে নামের ছারপত্র সংগ্রহ করা। এজন্য আপনাকে  যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর (আরজেএসসি) বরাবর নির্দিষ্ট ফি প্রদানপূর্বক নামের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করতে হবে।

নামের ছারপত্র পাওয়ার পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস যেমন নামের ছাড়পত্র, মেমোর‍্যান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি যুক্ত করে আবেদন করতে হবে। পাবলিক এবং প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির ক্ষেত্রে ডকুমেন্টে কিছু পার্থক্য আছে। আপনার কাগজপত্র ঠিক থাকলে ৭ দিনের মধ্যে নিবন্ধন পেয়ে যাবেন।

কোম্পানি সংক্রান্ত সকল কাজ সমাপ্ত হওয়ার পর আপনাকে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি যে ধরণের গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠা করতে চান তার উপর নির্ভর করবে আপনার কি কি ডকুমেন্ট লাগবে। নিচে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগতে পারে তার একটা তালিকা দেওয়া হলো –

  • ট্রেড লাইসেন্স

  • সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন

  • ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিন)

  • ব্যাংক সলভেন্সি সার্টিফিকেট

  • ভ্যাট নিবন্ধন সার্টিফিকেট

  • ফায়ার লাইসেন্স

  • পরিবেশ ছাড়পত্র

  • কারখানার ছাড়পত্র

  • কারখানার লেআউট পরিকল্পনার অনুমোদন

  • বন্ড লাইসেন্স

  • বয়লার লাইসেন্স

  • রপ্তানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট

  • আমদানি নিবন্ধন সার্টিফিকেট

  • চেম্বার অব কমার্সের সদস্যপদ

  • বিজিএমইএ / বিকেএমইএ সদস্যপদ

  • রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোতে তালিকাভুক্তির সনদ

আপনার গার্মেন্টস ব্যবসার ধরণ অনুযায়ী ডকুমেন্ট জমা দেওয়ার পর যদি অনুমোদিত হয় তাহলে আপনি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য লাইসেন্স পেয়ে যাবেন।

আরো পড়ুনঃ ১০ টি বড় ব্যবসার আইডিয়া

২. আইনি প্রক্রিয়া

গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন আইনগত বিষয় মোকাবিলা করতে হবে। এই আইনগত বিষয়গুলো আপনার গার্মেন্টস কোম্পানির নিবন্ধনের শুরু থেকে আরম্ভ হয়। যেমন আপনি যখন মেমোর‍্যান্ডাম অব অ্যাসোসিয়েশন এবং আর্টিকেল অব অ্যাসোসিয়েশন তৈরি করবেন যখন সেখানে আইনগত বিভিন্ন বিষয় থাকবে যা আপনাকে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ কাউকে দিয়ে তৈরি করাতে হবে।

আপনি যখন গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করতে যাবেন অখন আপনাকে জমি ক্রয় করতে হবে। জমি ক্রয় করার প্রক্রিয়ার মধ্যে অনেক আইনগত বিষয় আছে। আইনজীবী দিয়ে এসব কাজ না করালে ভবিষ্যতে জমির মালিকানা বা লিজ গ্রহীতা হিসেবে আপনি সমস্যায় পড়তে পারেন যা আপনার ব্যবসার অস্তিত্বের জন্য হুমকি হতে পারে। এছাড়া বিদেশে লেনদেন এবং বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রেও বিভিন্ন আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আপনাকে যেতে হবে।

৩. কারখানা স্থাপন এবং ব্যবসা শুরু

How to start Garments businesses

জমি ক্রয় করার পর আপনাকে কারখানা স্থাপন করতে হবে। দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার দিয়ে কারখানার ডিজাইন করাবেন। কারখানা স্থাপন করার জন্য অবশ্যই আপনাকে সকল নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। কারখানার ফায়ার সিস্টেমের প্রতি খুব ভালভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এটি খুবই সেনসিটিভ ইস্যু। কোন কারণে যদি কারখানায় আগুন লেগে যায় তাহলে আপনিও নিঃস্ব হয়ে যেতে পারেন অন্যদিকে অনেক শ্রমিকের প্রাণ ঝরে যাবে। এজন্য ফায়ার সিস্টেমের পাশাপাশি অবশ্যই এক্সিট সিঁড়ি রাখবেন।

কারখানার গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং পানির লাইনের ব্যবস্থা করতে হবে। কারখানার কার্যক্রম শুরু করার জন্য এগুলো অত্যাবশ্যকীয় উপাদান।

কারখানা স্থাপন করার পর আপনাকে পোশাক তৈরি করার জন্য যেসব মেশিনারির প্রয়োজন সেসব মেশিনারি ক্রয় করে কারখানায় স্থাপন করতে হবে।

কারখানা পরিচালনা করার জন্য দক্ষ এবং অভিজ্ঞ মানব সম্পদ নিয়োগ দিতে হবে। ব্যবস্থাপনা পর্যায়ে মানব সম্পদ নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা এবং মেধাকে অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। অভিজ্ঞ এবং মেধাবি কর্মকর্তারা আপনার ব্যবসায়ের সম্বৃদ্ধি এবং গতিশীলতা এনে দিবে। অন্যদিকে শ্রমিক দক্ষ এবং আধা দক্ষ মিলিয়ে নিয়োগ দিতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ বর্তমানে জনপ্রিয় ২০ টি উৎপাদন ব্যবসার আইডিয়া

একটি গার্মেন্টস কারখানায় কি কি ইউনিট থাকে এবং এসব ইউনিটে কোন ধরণের যন্ত্র ব্যবহার করা হয়? 

একটি গার্মেন্টস কারখানায় যেসব ইউনিট থাকে এবং এসব ইউনিটে যেসব যন্ত্র ব্যবহার করা হয় সেগুলো নিচে দেওয়া হলো –

নিটিং সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Circular Knit, Flat knitting, Twill Tape Mch, Reminder Machine, Twisting Machine, Doubling Machine, Rope Braiding Mch, Semiautomatic Winding Machine, Re-Winding M/C, Overlock Machine, Glove Knitting Machine etc.

বেসিক নিটিং সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Circular Knit, Flat Knit Machine, Inspection, Rolling & Loosing Machine।

ফেব্রিক ডায়িং সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে  Venus TM Smart, Athena, Fong’s-25 ALL FIT, Krisna, Sliting Machine, Santex Squizzer Machine (Hydro), Compactor, Ultra Soft Brush, Fabric Roll Packing Mach, Inspection Mac. etc.

প্রিন্টিং সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে M&R Brand Performer, Dryer with Accessoris, Cayenne Quarts Flash QFE 22″*24″, Single Head Ullrasonic Hot Fix Setter, Label Heat Setting Machine etc.

কাটিং সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Lectra Total Apparel System, Lectra CAD/CAM System, Lectra CAD/CAM System, Automatic Std. Cutting Machine, Pin table 240 CM with 10 meter etc.

গার্মেন্টস সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Sewing Machine, Electronic Lockstitch Button Holler, Overlock Machine, Winda Iron, Iron Table & Thread Sucking, Vacuum Smoothing Iron(Electric Flat type) etc.

ল্যাব ও কিউসি সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Minolta Spctrophoto meter, SF600*Spectro photo meter, Lab testing Eqiipment, Yarn friction TesterReibwer, Robolab-240-20 etc.

প্রিন্ট শপ সেকশন – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Sequin Embroidery Machine, Thermal Heads Assy B-SX4T etc.

ইউটিলিটি – এখানে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Gas Generator of 1 MW Capacity, Diesel Generator, ENERGEN Heat Recoury Boiler,  Screw Compressor Type, Refrigeration Dryer, Cooling Tower, Bus Bar Trucking System, Numbering Machine, Elevator etc.

ডব্লিউটিপি – এখানে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Deep Tubewell With Pumps, Water Treatment Plant 800 M3/hr, Water Treatment Plant 100 M3/hr etc, Water Treatment Plant

ওয়াশিং – এই সেকশনে যেসব মেশিন ব্যবহার করা হয় সেগুলো হচ্ছে Acid Wash M/C 550 Lbs.,Smartex Washing Plant, Tumble Dryer Capacity 300 Lbs, 130 Lbs Capacity Tumble Dryer, 55 Lbs Capacity Washing Machine, Electrolux Tumble Dryer,  Sample Washing M/C 5 Kgs., Sample Washing M/C 10 Kgs. Etc.

এসব মেশিন আপনি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে কিনতে পারবেন, যেমন – চীন, ভারত, তুরস্ক, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি ইত্যাদি।

গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করতে কেমন খরচ হবে? 

একটি গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে বিভিন্ন ডকুমেন্ট সংগ্রহ করতে হয়। নিবন্ধনের জন্য ফি দিতে হয়। পরামর্শকদের ফি দিতে হয়। জমি ক্রয় করে কারখানা স্থাপন করতে হয়। মেশিনারি ক্রয় করতে হয়। কারখানা পরিচালনা করার জন্য কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগ দিতে হয়।

সকল কাজ সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে বড় ধরণের বিনিয়োগ করতে হবে। এই বিনিয়োগের পরিমাণ কমপক্ষে ১৫/২০  কোটি থেকে কয়েকশো কোটি টাকা হতে পারে। ছোট গার্মেন্টস কারখানা দিতে চাইলে  ৮/১০ কোটি টাকাই যথেষ্ট। তবে মাঝারি বা বড় আকারে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে ১০০ কোটি টাকার উপর বিনিয়োগ করতে হতে পারে।

পোশাক বিক্রি করার জন্য বিদেশি গার্মেন্টস বায়ার আকর্ষণ করবেন কিভাবে?  

বর্তমানে বাংলাদেশে অসংখ্য গার্মেন্টস আছে। এই সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাই বলা যায় গার্মেন্টস ব্যবসা দিন দিন চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে। সবাই বিদেশি গার্মেন্টস বায়ার আকর্ষণ করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে। বিদেশি ক্রেতা আকর্ষণ করার জন্য যেসব কৌশল অবলম্বন করলে আপনি প্রচুর অর্ডার পাবেন সেগুলো নিচে আলোচনা করা হল –

১. মানসম্পন্ন পোশাক উৎপাদন

বিদেশি ক্রেতা আকর্ষণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই মানসম্পন্ন পোশাক তৈরি করতে হবে। কারণ বিদেশি ক্রেতারা মানের দিক দিয়ে কোন ছাড় দিতে চায় না। তারা এমন কারখানার সাথে চুক্তি করতে চায় যারা মানসম্মত পোশাক বানাতে পারে।

২. বায়িং হাউজগুলোর সাথে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা 

গার্মেন্টস ব্যবসার উপর বায়িং হাউজগুলোর বিরাট প্রভাব রয়েছে। কারণ বায়িং হাউজ বিদেশি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করে পোশাক রপ্তানির অর্ডার সংগ্রহ করে। তারপর বিভিন্ন কারখানায় সেসব পোশাক উৎপাদনের জন্য অর্ডার করে।

তাই আপনি যদি কিছু বায়িং হাউজের সাথে ভাল সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে পারেন তাহলে তাদের মাধ্যমে আপনি প্রচুর অর্ডার পাবেন। এর ফলে আপনার সুনাম বিদেশি ক্রেতাদের কাছেও পৌঁছে যাবে।

৩. ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর গুরুত্ব দিতে হবে

বিদেশি ক্রেতা আকর্ষণ করার জন্য আপনাকে অবশ্যই ডিজিটাল মার্কেটিং এর উপর জোর দিতে হবে। কারণ ডিজিটাল মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি সারা বিশ্বে আপনার ব্যবসার প্রচারণা চালাতে পারবেন। ক্রেতাদের কাছে আপনার পণ্যের ভাল দিকগুলো খুব সহজেই তুলে ধরতে পারবেন।

ডিজিটাল মার্কেটিং ক্রেতা এবং বিক্রেতার মাঝে যে দূরত্ব আছে সেটা ঘুচিয়ে দিতে বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।

৪. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশগ্রহণ 

আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় অংশ নিয়ে আপনি বিভিন্ন দেশের ক্রেতাদের খুব সহজেই আকর্ষণ করতে পারবেন। যেহেতু আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় বিভিন্ন দেশের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে তাই এসব মেলাতে বিভিন্ন ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পণ্য নির্বাচন করার জন্য তাদের প্রতিনিধি পাঠায়। এসব প্রতিনিধিদের সামনে আপনি যদি আপনার পণ্য ভালভাবে উপস্থাপনা করতে পারেন তাহলে আপনি প্রচুর অর্ডার পেতে পারেন।

৫. পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ডিজিটাল প্লাটফর্মে যুক্ত থাকা 

বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্ম আছে যেগুলোতে বিক্রেতা তাদের পণ্য প্রদর্শন করে থাকে এবং ক্রেতারা সেসব পণ্য ক্রয় করে থাকে। এরকম একটি বিখ্যাত ডিজিটাল প্লাটফর্ম হচ্ছে  আলিবাবা আলিবাবাতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন করে থাকে। বাংলাদেশেরও অনেক পোশাক রপ্তানিকারক আলিবাবার মাধ্যমে ব্যবসা করছে। এছাড়া  Foursource,
Fibre2Fashion Marketplace, Indiamart  এসব প্লাটফর্ম ব্যবহার করেও আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের আকর্ষণ করতে পারবেন।

সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

বর্তমান যুগে যে কোন জিনিস কেনার আগে মানুষ সার্চ ইঞ্জিনে সেই জিনিস সম্পর্কে সার্চ করে দামসহ বিভিন্ন বিষয়ে জেনে নেয়। সার্চ ইঞ্জিনে যে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটগুলো প্রথম দিকে প্রদর্শিত হয় মানুষ সেগুলোতেই বেশি ভিজিট করে থাকে। যে প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে মানুষ বেশি পরিমাণে ভিজিট করবে সেই প্রতিষ্ঠানের পণ্য বেশি বিক্রি হবে এটাই খুব স্বাভাবিক ব্যাপার।

তাই আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইট তৈরি করে সেখানে পোশাক সম্পর্কিত প্রাসঙ্গিক কন্টেন্ট তৈরি করুন। তারপর দক্ষ এসইও দ্বারা সেগুলোকে অপটিমাইজেশন করুন। আপনি যে দেশের মার্কেটকে টার্গেট করতে চান সেই দেশের জন্য লোকাল এসইও করতে পারেন। এভাবে আপনি প্রচুর পরিমাণে বিদেশি গার্মেন্টস বায়ার আকর্ষণ করতে পারবেন।

গার্মেন্টস ব্যবসা কেমন লাভজনক? 

গার্মেন্টস ব্যবসা একটি লাভজনক ব্যবসা। বিশ্ব অর্থনৈতিক অবস্থার উপর এই ব্যবসার লাভ ক্ষতি অনেকাংশে নির্ভর করে। যদি বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা খুব ভাল থাকে তাহলে দেখা যায় পোশাকের দাম বেড়ে যায়। তখন রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা অনেক লাভবান হয়।

কিন্তু যখন বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়ে তখন পোশাকের দাম কমে যায় যার ফলে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়েন। যেমন কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে সারা বিশ্বে গভীর মন্দা দেখা দেয় যার কারণে পোশাকের দাম অনেক কমে যায়। এর ফলে রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।

পোশাক তৈরির প্রধান কাঁচামাল সুতার দামের উপরও লাভ ক্ষতি অনেকাংশে নির্ভর করে। সুতার দাম বেড়ে গেলে লাভের পরিমাণ কমে যায়। আবার সুতার দাম যদি কমে যায় তাহলে লাভের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে।

আসলে গার্মেন্টস ব্যবসা খুব লাভজনক কারণ গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা একসাথে বিরাট সংখ্যক পোশাক বিক্রি করে থাকে। আপনি চিন্তা করে দেখেন একজন গার্মেন্টস বায়ার আপনাকে ৫ লাখ পিস শার্টের অর্ডার দিল। আপনি কম করে হলেও প্রতি শার্টে ১০-১৫ টাকা লাভ করবেন। যদি ১০ টাকা করেও লাভ করেন তাহলে ৫,০০,০০০ × ১০ = ৫০,০০,০০০ (৫০ লাখ) টাকা আপনার মোট লাভ থাকবে। আপনি যত বেশি অর্ডার পাবেন তত বেশি আপনার লাভের পরিমাণ বাড়তে থাকবে।

পরিশেষে 

গার্মেন্টস ব্যবসা করতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই কোন গার্মেন্টসে কাজ করতে হবে বা বায়িং হাউজের সাথে যুক্ত থাকতে হবে। এই ফর্মুলা শুধু রেডিমেড গার্মেন্টস ব্যবসার জন্য না প্রায় সব ব্যবসায়ের জন্য। কারণ একটি ব্যবসা শুরু করার আগে সেই ব্যবসার কাঁচামাল সংগ্রহ, মেশিনারি, সাপ্লায়ার,  এবং ব্যবসায়ীক কৌশল ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে তারপর সেই ব্যবসা শুরু করতে হয়। তাই আমিও বলব আপনি আগে গার্মেন্টস ব্যবসা সম্পর্কে খুব ভালভাবে জেনে বুঝে এবং সম্ভাব্য লাভ ক্ষতি কেমন হতে পারে সেসব আইডিয়া নিয়ে তারপর গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করুন।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here