বড় ব্যবসার আইডিয়া

বড় ব্যবসায়ীরা বড় বড় বিনিয়োগ করেন তাই তারা বড় ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে জানতে চান। বড় ব্যবসার আইডিয়া সম্পর্কে ধারণা কম থাকার কারণে অনেকেই তাদের কাছে অলস পড়ে থাকা বিশাল অঙ্কের অর্থ বিনিয়োগ করতে পারেন না।

আসলে বৃহৎ ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ। কারণ আপনি যখন বৃহৎ শিল্পে বিনিয়োগ করবেন তখন আপনাকে বিশাল অঙ্কের অর্থ আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে হবে। বড় ঋণ মানে বড় দায়। তবে একটা কথা আছে টাকায় টাকা আনে। আপনি যত বড় বিনিয়োগ করবেন আপনার মুনাফার পরিমাণ তত বড় হবে।

বড় ব্যবসার আইডিয়া

১. গার্মেন্টস ব্যবসা 

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮০ শতাংশই আসে পোশাক রপ্তানি করে। বিশ্ব বাজারে পোশাক রপ্তানিতে  বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়তে। যদিও ভিয়েতনাম বাংলাদেশের খুবই নিকটে আছে। মাঝে মাঝে দেখা যায় ভিয়েতনাম বাংলাদেশকে টপকে যায় তারপর বাংলাদেশ পুনরায় তার যায়গা দখল করে।

আপনি যদি বড় ব্যবসার আইডিয়া খুজেন তাহলে আপনি পোশাক কারখানার কথা চিন্তা করতে পারেন। কারণ পোশাক খাতে বাংলাদেশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এখানে বিনিয়োগ করলে আপনার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম থাকবে।

আমাদের দেশে সাধারণত দুই ধরণের পোশাক কারখানা দেখা যায়, একটি হচ্ছে ওভেন গার্মেন্টস যেখানে শার্ট প্যান্ট ইত্যাদি তৈরি করা হয়, আরেকটি হচ্ছে নীট গার্মেন্টস যেখানে টি শার্ট, সোয়েটার ইত্যাদি তৈরি করা হয়। আপনি কোন ধরণের পোশাক কারখানা দিবেন তা আগেই ঠিক করে নিন।

পোশাক কারখানা দেওয়ার জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগবেঃ

  • ট্রেড লাইসেন্স,

  • সার্টিফিকেট অব ইনকরপোরেশন,

  • টিন, বিন,

  • পরিবেশ ছাড়পত্র,

  • ফায়ার এন্ড সিভিল ডিফেন্স,

  • ব্যাংক একাউন্ট,

  • বিজিএমইএ / বিকেএমইএ সদস্য

  • বন্ড লাইসেন্স

  • বয়লার লাইসেন্স ইত্যাদি

একটি পোশাক কারখানা স্থাপন করতে কমপক্ষে ৮-১০ কোটি লাগবে। তবে আপনি ভাল যন্ত্রপাতি এবং বেশি উৎপাদন সক্ষমতার কারখানা দিতে চাইলে খরচের পরিমাণ বেশি হবে।

আরো পড়ুনঃ কিভাবে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করবেন?(একটি কমপ্লিট গাইড)

২. ইস্পাতের ব্যবসা 

বড় ব্যবসার আইডিয়া

একটি বড় ব্যবসার আইডিয়া হিসেবে ইস্পাতের ব্যবসা অন্যতম। এটি একটি ভারী শিল্প খাত। এটি যথেষ্ট লাভজনক ব্যবসা, আপনি উৎপাদন খরচের ১০-২০% পর্যন্ত আয় করতে পারবেন।

বাংলাদেশে বর্তমানে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প চলমান, এর পাশাপাশি দেশে অসংখ্য আবাসন প্রকল্প চলামান যার কারণে ইস্পাতের চাহিদা বেড়েই চলেছে।বর্তমানে বাংলাদেশে ইস্পাতের চাহিদা বছরে ৮০ লাখ টন। ইবিএল সিকিউরিটিজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, আমাদের দেশে মাথাপিছু ইস্পাতের চাহিদাও বাড়ছে। ২০১৮ সালে মাথাপিছু ইস্পাতের ব্যবহার ৪৫ কেজি ছিল যা ২০২২ সালে ৭৩ কেজিতে পৌঁছাবে।

আপনি যদি এই বিশাল বাজারে অংশ নিতে চান তাহলে এদেশের ৪০০ ইস্পাতের উৎপাদনকারীর সাথে আপনাকে লড়াই করতে হবে। এই বাজারে টিকে থাকতে হলে অবশ্যই মানের দিকে খুব বেশি জোর দিতে হবে।

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ৮০ টি লাভজনক ব্যবসার আইডিয়া

৩. হিমায়িত খাদ্য ব্যবসা 

বর্তমানে দেশ এবং বিদেশে হিমায়িত খাবারের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে। হিমায়িত খাবারের চাহিদা বাড়ার পেছনে কিছু কারণ আছে, যেমন মানুষের আয় বৃদ্ধি, কর্মব্যস্ততা, খাবারের বৈচিত্রতা অন্বেষণ ইত্যাদি।

হিমায়িত খাদ্যের ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, আমাদের দেশে প্রতি বছর ৪০০ কোটি টাকার হিমায়িত খাবার বিক্রি হচ্ছে। আর বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর প্রায় সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার হিমায়িত মাছ বিদেশে রপ্তানি হয়। এর মধ্যে রয়েছে চিংড়ি, সামুদ্রিক মাছ এবং চাষের মাছ।

আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরণের খাবার হিমায়িত অবস্থায় বিক্রি হচ্ছে যেমন পরোটা, সমুচা, শিঙারা, রুটি, চিকেন স্প্রিং রোল, চিকেন নাগেট, চিকেন সসেজ, চিকেন পেটি, পুরি, পপকর্ন, স্ট্রিপস, ফ্রেঞ্চফ্রাইসহ বিভিন্ন ধরণের সবজি। তাই দিন দিন জনপ্রিয় হতে থাকা হিমায়ত খাবারে ব্যবসা আপনিও শুরু করতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ ২০২১ সালের জন্য ১০ টি পাইকারি ব্যবসার আইডিয়া

৪. আমদানি-রপ্তানি ব্যবসা

আমদানি রপ্তানি ব্যবসা অবশ্যই লাভজনক বড় ব্যবসার আইডিয়া। আমদানি-রপ্তানির জন্য কোন নির্দিষ্ট পণ্য নেই। আপনি যেকোন পণ্য আমদানি-রপ্তানি করতে পারেন।

আমাদের দেশে আমদানিকারকরাই সবচেয়ে বেশি লাভজনক অবস্থায় আছে। কারণ তারা যেকোন পণ্য বিশাল পরিমাণে আমদানি করে যার কারণে ক্রয় মূল্য হয় অনেক কম। এর ফলে দেশের বাজারে সেই পণ্য বিক্রি করে অনেক বেশি লাভবান হয়।

পণ্য রপ্তানি করা হচ্ছে চ্যালেঞ্জের বিষয়। কারণ ক্রেতাকে কনভিন্স করে বিক্রি করা যথেষ্ট কঠিন। তাছাড়া আমাদের দেশে পোশাক খাত, হিমায়িত খাবার, পাট, চামড়া ছাড়া অন্যান্য পণ্য খুব কম পরিমাণে রপ্তানি হয়। যার কারণে বিশ্ব বাজারে আমাদের পরিচিতি কম। এজন্য আমাদের মত দেশ থেকে পণ্য বিদেশে রপ্তানি করাও সহজ ব্যাপার নয়।

আরও পড়ুনআমদানি-রপ্তানি ব্যবসা কিভাবে শুরু করবেন তার গাইডলাইন

৫. কম্পিউটার সামগ্রী এবং সফটওয়্যার ব্যবসা  

কম্পিউটার সামগ্রী এবং সফটওয়্যার ব্যবসা

বাংলাদেশ দ্রুতই ডিজিটালাইজেশনের দিকে যাচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি উভর ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত বেড়ে চলেছে। এসব কারণে কম্পিউটার এবং সফটওয়্যার মার্কেটের আকার দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

আর সফটওয়ারের বিষয়টা কিন্তু দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আপনি সারা বিশ্বেই ব্যবসা করতে পারবেন। Grandviewresearch এর মতে, বিশ্বে বর্তমানে ৩৯০ বিলিয়ন ডলারের সফটওয়্যার মার্কেট রয়েছে। এই বিশাল বাজারে ভাগ বসাতে চাইলে আপনিও শুরু করতে পারেন সফটওয়্যার ব্যবসা।

৬. ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের ব্যবসা  

আমাদের জীবনের সাথে ইলেক্ট্রনিকস পণ্যের ব্যবহার এমনভাবে জড়িয়ে পড়েছে যে ইলেক্ট্রনিকস পণ্য ছাড়া আমাদের জীবন বর্তমানে অচল। যেমন আপনি চাইলেই টিভি ফ্রিজ ছাড়া এখন থাকতে পারবেন না। মানুষের আয় বাড়ার সাথে সাথে মানুষের মধ্যে এই ধরণের চিন্তা করার প্রবণতা বাড়ছে।

যেহেতু বাংলাদেশের ইলেক্ট্রনিকস এর বাজার আমদানি নির্ভর। তাই আপনি বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে এই ব্যবসা শুরু করতে পারেন। আবার চাইলে ওয়ালটনের মত নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারেন।

৭. সিরামিক ব্যবসা 

সিরামিক ব্যবসা একটি লাভজনক বড় ব্যবসার আইডিয়া। আমাদের দেশে সিরামিক পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। বাংলাদেশ সিরামিক উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিসিএমইএ) তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সিরামিকের বাজার আকার প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা। এই বাজারে ৮৫ ভাগ বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের দখলে, আর চাহিদার বাকি অংশ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

তৈজসপত্র, টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যার এই তিন খাতের সিরামিক পণ্যই আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। তবে টাইলসের উৎপাদকের সংখ্যাই বেশি কারণ সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় টাইলস। সম্ভাবনাময় এই খাতে বিনিয়োগ করলে আপনি লাভবান হবেন এই কথা বলা যায়।

৮. প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন

বাংলাদেশে প্লাস্টিক পণ্যের বাজার দ্রুত বিকশিত হচ্ছে। জগ, মগ, চেয়ার, টেবিল থেকে শুরু করে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের প্যাকেট, ইনজেকশন সিরিঞ্জ, রক্ত সংগ্রহের ব্যাগ, ক্রোকারিজ, ঘরের দরজা, জানালা, স্যানিটারি সবকিছু এখন প্লাস্টিক দিয়ে তৈরি হচ্ছে।

শিল্প মন্ত্রণালয়ের তৈরি ন্যাশনাল প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০২০ এ বলা হয়েছে বর্তমানে বাংলাদেশী প্লাস্টিক পণ্যের বাজারের আকার ২.৯৯ বিলিয়ন ডলার। ২০৩০ সাল নাগাদ এ বাজারের আকার ১০ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়াবে।

অনেক কোম্পানি এখন প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদনে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছে কারণ প্লাস্টিক পণ্যের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল। এই ধরণের লাভজক ব্যবসায় আপনিও বিনিয়োগ করতে পারেন।

৯. আর্থিক প্রতিষ্ঠান 

যেহেতু আপনি বড় ব্যবসার আইডিয়া খুঁজছেন তাই আপনি আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করতে পারেন। যেমন ব্যাংক, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বীমা, ক্ষুদ্র ঋণ ইত্যাদি ব্যবসায়ের সাথে যুক্ত হতে পারেন।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ব্যাংক ব্যবসা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যবসা। একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে ৫০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধন প্রয়োজন যা পূর্বে ৪০০ কোটি টাকা ছিল। তবে আপনি চাইলেই ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন না। সরকার দেশের আর্থিক অবস্থা পর্যালোচনা করে যদি মনে করে দেশে নতুন ব্যাংকের দরকার আছে তখন আপনার আবেদন গ্রহণ করা হবে।

নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংকের মত সব ধরণের কাজ করতে পারে না। যেমন ব্যাংকের মত সাধারণ জনগনের কাছ থেকে আমানত গ্রহণ করতে পারে না, বৈদেশিক বাণিজ্যে অংশ নিতে পারে না, চেক, টিটি, ডিডি ইত্যাদি গ্রহণ বা প্রদান করতে পারে না। নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সদস্যদের কাছ থেকে আমানত নিতে পারে এবং ঋণ দিয়ে থাকে। তারা বন্ধকি ঋণ, আবাসন খাতে সল্প এবং দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দিয়ে থাকে।

দেশে বর্তমানে ৭৯ টি বীমা কোম্পানি আছে। তবে বাংলাদেশে বীমা ব্যবসা এখনো কাঙ্ক্ষিত অবস্থায় পৌঁছাতে পারে নাই। বীমা কোম্পানি দেওয়ার জন্য জীবন বীমা কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন লাগবে ৩০ কোটি টাকা আর সাধারণ বীমার জন্য পরিশোধিত মূলধন লাগবে ৫০০ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র ঋণ ব্যবসা একটি সামাজিক ব্যবসা। সমাজের পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক গোষ্ঠীকে সাহায্য করার মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত মুনাফা করা। যদিও আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠান গরীব মানুষগুলোর কাছ থেকে মাত্রাতিরিক্ত মুনাফা করে থাকে।

এই ধরণের ব্যবসা অবশ্যই লাভজনক ব্যবসা। তাই আপনার যদি বড় ধরণের বিনিয়োগ করার সামর্থ্য থাকে তাহলে আর্থিক ব্যবসায় নামতে পারেন।

১০. মাংস উৎপাদন ব্যবসা 

এটি একটি বড় ব্যবসার আইডিয়া হতে পারে যদি আপনি বড় পরিসরে করতে পারেন। আমি মনে করি বর্তমানে একটি একটি লাভজনক ব্যবসা।

এই ধরণের ব্যবসা শুরু করার জন্য আপনাকে একদিকে যেমন গরু, ছাগল, মুরগি, ভেড়া ইত্যাদির খামার করতে হবে অন্যদিকে মাংস প্রসেসিং করার জন্য একটি কারখানা করতে হবে। তবে খামার না দিয়ে সরাসরি অন্য খামার থেকেও কিনতে পারেন।

আমাদের দেশে ১৭ কোটি মানুষ। এটি একটি বিশাল বাজার। যেহেতু এদেশের বেশিরভাগ মানুষ মুসলমান তাই আপনি যদি হালাল উপায়ে মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ করে বাজারে ছাড়তে পারেন তাহলে গ্রাহকের প্রচুর সাড়া পাবেন। আর বাংলাদেশে এখনো এই ধরণের ব্যবসায় কোন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি নেই তাই আপনি চাইলেই এই বিশাল বাজারে আধিপত্য বিস্তার করতে পারবেন।

বাংলাদেশ বিজনেস জার্নাল বাংলাদেশের প্রথম গবেষণাধর্মী একটি বিজনেস ব্লগ। আমরা উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্পর্কিত বিভিন্ন আইডিয়া, পরিসংখ্যান এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের লেখা এবং পরামর্শ যদি উদ্যোক্তাদের ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির পাথেয় হয়ে থাকে তাহলেই আমাদের পরিশ্রম সার্থক হয়েছে বলে আমাদের কাছে প্রতীয়মান হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here